তেল পরিবহনকালে চুরি ঠেকাতে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন শুরু হলেও বন্ধ হয়নি চুরি

তেল পরিবহনকালে চুরি ঠেকাতে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন শুরু হলেও বন্ধ হয়নি চুরি

পরিবহন যোগে চট্টগ্রাম থেকে জ্বালানি তেল সরবরাহ করতো তিনটি তেল কোম্পানির। সে সময় হাজার হাজার লিটার তেল প্রতি নিয়ত গায়েব হয়ে যেত পথে।সে তেল চুরী বন্ধ করতে পরলনা । পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহের মূল লক্ষ্য হচ্ছে তেল পরিবহনকালে চুরি ঠেকানোসহ সিস্টেম লস বন্ধ করা। অথচ বহুল প্রত্যাশার সেই পাইপলাইনে পাঠানো তেলই গায়েব করে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত এবং প্রকৃত দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে।
২০১৮ সালের অক্টোবরে একনেকে অনুমোদন পাওয়া ২ হাজার ৮৬১ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। করোনা পরিস্থিতিতে সময় বাড়িয়ে চলতি বছরের মার্চে কাজ শেষ হয়, খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা। প্রকল্পে চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল পর্যন্ত ১৬ ইঞ্চি ব্যাসের ২৪১.২৮ কিলোমিটার এবং গোদনাইল থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত ১০ ইঞ্চি ব্যাসের ৮.২৯ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে। ২২টি নদী ও খাল পেরিয়ে যাওয়া এ ২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ নেটওয়ার্কে মোট ৯টি স্টেশন এবং ২৮৬.৮৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। পথে কুমিল্লার মোগবাড়ীতে আধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় ডিপো, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে পদ্মা ও মেঘনা পেট্রোলিয়ামের রিজার্ভার এবং ফতুল্লায় যমুনা ও মেঘনা পেট্রোলিয়ামের রিজার্ভার নির্মাণ করা হয়।কিন্তু শত শত কোটি টাকা খরচ করেও তেল চুরি বন্ধ করতে পারলনা ।যমুনা অয়েল কোম্পানির এক লাখ লিটারের বেশি ডিজেল গায়েব করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উটার পর এখন সকলের মুখে মুখে এ কথা।সাম্পতিক যমুনা অয়েল কোম্পানির এক লাখ লিটারের বেশি ডিজেল গায়েব করে দেয়া হয়েছে গেছে। অবশ্য কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ট্যাংকের ক্যালিব্রেশনে ভুল থাকায় হিসাবে গোলমাল হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ ওঠার পর যমুনা অয়েল কোম্পানি ফতুল্লা ডিপোর ওই দুটি ট্যাংক সিলগালা করে দেয়। কর্তৃপক্ষ বিষয়টিতে ক্যালিব্রেশনের কোনো সমস্যা রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে গতকাল একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এজিএম (ইঅ্যান্ডডি) মোহাম্মদ আলমগীর আলমকে প্রধান করে গঠিত কমিটিতে আছেন এজিএম (ডিপো অপারেশন্স) শেখ জাহিদ আহমেদ, ম্যানেজার (অপারেশন্স) মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া, ম্যানেজার (ডিপো) আসলাম খান আবুল উলায়ী এবং সিপিডিএল ও পিটিসিএলের একজন করে প্রতিনিধি।
এ ঘটনার পর অবশ্য কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ট্যাংকের ক্যালিব্রেশনে ভুল থাকায় হিসাবে গোলমাল হয়েছে। ট্যাংকের ক্যালিব্রেশনে যদি ভুল থাকে তাহলে গত কয়েক বছরে কত লাখ লিটার তেল গায়েব করা হয়েছে সেই প্রশ্নও তোলা হয়েছে। তেল গায়েবের পর কোম্পানির ফতুল্লা ডিপোর দুটি ট্যাংক সিলগালা করে দিয়ে গতকাল রোববার ৬ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহে লস শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার যে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছিল এ ঘটনা ওই আশাবাদকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।

সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম–ঢাকা পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহ কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর গত ১৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামস্থ টার্মিনাল থেকে ফতুল্লা ডিপোতে প্রেরণের জন্য ১ কোটি ৫ লাখ লিটার ডিজেল পাম্প করা হয়। ২২ সেপ্টেম্বর ফতুল্লা ডিপোর ২২ ও ২৩ নম্বর ট্যাংকে তেল গ্রহণ করা হয়। ২২ নম্বর ট্যাংকের ধারণক্ষমতা ৬৯ লাখ ৫৯ হাজার ৬৯ লিটার এবং ২৩ নম্বর ট্যাংকের ধারণক্ষমতা ৫০ লাখ ৪৭ হাজার ৯৭৭ লিটার। দুটি ট্যাংকে ১ কোটি লিটার তেল পাঠানো হলেও পরবর্তীতে মোট ১ লাখ ১২ হাজার ৬১৪ লিটার বা ৯৪ দশমিক ৯৫ টন তেল কম পাওয়া গেছে। এই বিপুল পরিমাণ তেল গায়েব করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠলে তেল সেক্টরে চাঞ্চল্য শুরু হয়। অভিযোগ করা হয়, ফতুল্লা ডিপোকেন্দ্রিক সংঘবদ্ধ একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে কোটি কোটি টাকার তেল লোপাট করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ এক লাখ লিটারের বেশি ডিজেল গায়েব করে দেয়া হয়েছে।

যমুনা অয়েল কোম্পানির একাধিক কর্মকর্তাকে ফোন করা হয়। কিন্তু তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ট্যাংক সিলগালা করে রাখা হয়েছে। তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp
Share on email