
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ১০ নং সলিমপুর ইউনিয়নের জঙ্গল সলিমপুর ছিন্নমূল ও পার্শ্ববর্তী আলীনগরে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে গত রাত পর্যন্ত বিরতিহীন সংঘর্ষে এক যুবক নিহত হয়েছেন এবং উভয়পক্ষ মিলিয়ে কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসা সূত্রে জানা গেছে।অন্যদিকে গতকাল নিউজ করতে গেলে উক্ত এলাকায় সাংবাদিকের উপর হামলা করা হয়েছে। হাৃলায় এখন টিভির ব্যুরো প্রধান হোসাইন জিহাদ আহত হন।
স্থানীয় সূত্র ও পুলিশের বরাত থেকে জানা যায়, সংঘর্ষটি শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাত থেকে শুরু হয়ে শনিবার (৪ অক্টোবর) দুপুর পর্যন্ত চালিয়ে নেওয়া হয়। সংঘর্ষে কুপিয়ে ও গুলিবিদ্ধ হওয়ার চিহ্ন নিয়ে আহতরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতাল সূত্র বলছে, হাসপাতালে নেওয়ার সময় এক ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণা করা হয়; নিহতকে স্থানীয়রা ‘কাল্লু’ নামে পরিচয় দেন। নিহতের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি।
স্থানীয়রা বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই এই এলাকার সরকারি পাহাড়-টিলা দখল করে কেটে প্লট বানিয়ে বিক্রির মাধ্যমে একটি বিস্তৃত অবৈধ ব্যবসা চলে—এর নিয়ন্ত্রণে থাকা ইয়াছিন নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। ৫ আগস্টের পর থেকে সলিমপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক রোকন উদ্দিন মেম্বারও ওই এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা শুরু করলে উত্তেজনা আরও বাড়ে। রোকন মেম্বারের অনুসারীদের একটি অডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে পাহাড় রক্ষা-সংক্রান্ত অবস্থান ও অস্ত্র সংগ্রহের কথাও উল্লেখ রয়েছে—স্থানীয়দের দাবি অনুযায়ী এটিই উত্তেজনার ব্যাকবোন।
ঘটনার সূত্র অনুযায়ী, শুক্রবার রাত ১০টা থেকে রোকন মেম্বারের অনুসারীরা আকবরশাহ এলাকার বড় গ্যাসলাইন সংলগ্ন মাঠ, ফকিরহাট ও জলিল এলাকায় জড়ো হতে থাকে। এরপর রোকন গ্রুপ শতাধিক সঙ্গী নিয়ে আলীনগর ও সলিমপুরটিতে হামলায় নামে। পাল্টা প্রতিরোধে ইয়াছিন গ্রুপেও কয়েকশ’ সদস্য যুদ্ধবন্দুক ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অংশ নেয়। সংঘর্ষের সময় বহু বাড়ি ভাঙা–কুপিয়ে নষ্ট করা হলে দোকানপাটে লুটপাটও হয়; স্থানীয়দের দাবি, উভয় গ্রুপেই কয়েকদিকে জিম্মি নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে—কমপক্ষে ৪০ জনকে জিম্মি করা হয়েছে; স্থানীয় সূত্র বলছে, ইয়াছিন গ্রুপ রোকন গ্রুপের প্রায় ১৫ জনকে এবং রোকন গ্রুপ ইয়াছিন গ্রুপের প্রায় ২৫ জনকে আটক নিয়ে গেছে।
চমেকে ভর্তি থাকা আহতদের মধ্যে যারা নাম প্রকাশ করা হয়েছে তারা হলেন: জাবেদ প্রকাশ (৩৮), মো. জাকির (৪৮), মো. তানভীর হোসেন (২৩), সিরাজুল ইসলাম (৪৩), ফজলুল করিম (৩২), ইসমাইল হোসেন বাবু (৩০), জাহিদুল ইসলাম (১৯), সৌরভ বড়ুয়া (১৭), মো. পারভেজ (২০), মো. নুরুল আলম (৪০), শুক্কুর আলম (২২), মো. রায়হান (১৮), মো. শামীম (২৯), মোহাম্মদ হারুন (৪৫), মাসুদ (৩৫) ও এমদাদুল হক (৪৭)। বাকিদের নাম-পরিচয় এখনও সংগ্রহ করা হচ্ছে।
ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সোহেল রানা জানান, “জঙ্গলে সংঘর্ষ ও গুলির শব্দ পাওয়া গেলে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। সেখান থেকে প্রথম দফায় চাপাতির কোপে আহত অবস্থায় প্রায় ১৫ জনকে উদ্ধার করে চমেকে পাঠানো হয়েছে; হাসপাতালে এক জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। আহতদের মধ্যে আরও দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।” তিনি বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী অতিরিক্ত দল মোতায়েন করা হবে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, রাজনৈতিক প্রভাবশালী কিছু মহলের সাহায্যে দীর্ঘদিন থেকে এই পাহাড়-টিলাগুলো কেটে প্লট বানিয়ে বিক্রি করা হচ্ছিল; নির্দিষ্ট সময়ে প্রশাসনের অভিযান হলেও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর আবারই এলাকা শাসিত হচ্ছে অপরাধী চক্রের হাতে—এটিই সংঘর্ষের মূল কারণ বলে তারা মনে করছেন।
পুলিশ ঘটনাটির বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন এবং স্লোগান-সহ বিক্ষোভ ও লুটপাটের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। ঘটনার বিষয়ে রোকন উদ্দিন মেম্বার ও ইয়াছিনের বক্তব্য নিতে স্থানীয় সাংবাদিকরা যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন; তবে দু’জনেই ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।