রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তারেক রহমান তার বক্তব্যে বোঝাতে চেষ্টা করেছেন- কী কষ্ট ও সংকটের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ সময় বিএনপি পার করেছে। ফলে নির্বাচনকে সামনে রেখে যদি ঐক্য না থাকে তাহলে দলের এই দীর্ঘ বছরের কষ্ট ব্যর্থ হয়ে যাবে। তার এ বক্তব্যে সব আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। দ্বন্দ্ব নিরসনে বড় নিয়ামক হিসাবে কাজ করবে। বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতারাও এমনটি মনে করছেন।
প্রসঙ্গত, মতবিনিময় সভার শেষ দিনে সোমবার রাতে তারেক রহমান মা খালেদা জিয়ার ত্যাগের কথা উল্লেখ করে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমার মাও মৃত্যুর মুখোমুখি ছিল। ইচ্ছে করলে মাকে আমি নিয়ে আসতে পারতাম। কিন্তু মাও তো আসেনি আপনাদের ছেড়ে। ৬ বার সে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছে। মৃত্যুর মুখোমুখি সত্ত্বেও মা আপনাদের ছেড়ে আসেননি। সেই মাকে সামনে রেখে আপনারা এক থাকবেন। যিনি আপনাদের জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করেছেন। যে মা তার চল্লিশ বছরের বাড়ি হারিয়েছেন। শেখ হাসিনা মাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। যে মা তার সন্তানকে হারিয়েছে। মা বুঝে সন্তান হারানোর ব্যথা। সেই মায়ের সবকিছুর মূলেই ছিল এ দেশের জনগণ। সবকিছুর মূলেই ছিল একটি গণতন্ত্রিক রাষ্ট্র। ইচ্ছে করলেই তো মা এ ব্যাপারে আপস করতে পারতেন। কিন্তু মা কোনো আপসে যাননি। তার লক্ষ্যই ছিল ঐক্যবদ্ধের মধ্য দিয়ে একটি জাতি গঠন করা। সেখানে কত ত্যাগ না স্বীকার করেছেন মা। একই সঙ্গে গণতন্ত্রের জন্য কত লোক শাহাদাত বরণ করেছে। কত লোক জেল খেটেছে, কত লোকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে মা যদি আপস করতেন তাহলে এত কষ্ট মার করতে হতো না।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্যে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন গত ১৭ বছর কী সংকটের মধ্য দিয়ে বিএনপি গিয়েছে। অন্যান্য দলে দেখা যায়, তাদের শুধু কর্মীরা ত্যাগ স্বীকার করেন। অথচ বিএনপিতে শুধু দলের কর্মীরাই ত্যাগ স্বীকার করেননি, দলের শীর্ষ নেতাও সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। এটাই তিনি বোঝাতে চেষ্টা করেছেন। বার্তা দিয়েছেন কী কষ্টের মধ্য দিয়ে, কী সংকটের মধ্য দিয়ে ১৭ বছর দলটা গেল, নির্বাচনকে সামনে রেখে যদি ঐক্য না থাকে, তাহলে দলের এই দীর্ঘ বছরের কষ্টটা ব্যর্থ হয়ে যাবে। আমার কাছে মনে হয়, অনেকের মধ্যে এই বক্তব্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কিন্তু যারা বেইমানি করবেন, তারা দলের কাছে হেরে যাবেন, এমনকি নাগরিকদের কাছেও হেরে যাবে। কারণ, দলের প্রতি মানুষের যে প্রতিশ্রুতি, এটাই খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের প্রতি মানুষের প্রতিশ্রুতি। যারা দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাবে, তাদের সাধারণ মানুষও ভালো চোখে দেখবে না। কারণ, মানুষ বেইমানদের পছন্দ করে না।’
এদিকে বৈঠক শেষে মনোনয়নপ্রত্যাশী কয়েকজন নেতা জানান, এ বক্তব্য দিতে গিয়ে তারেক রহমান আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। এ সময় উপস্থিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।
মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে আশ্বস্ত করেছি, নির্বাচন সামনে রেখে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকব এবং তার নির্দেশে সবাই এক হয়ে কাজ করব।’ তিনি বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা বলেছেন।’
নাটোর-১ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির কেন্দ্রীয় সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, ‘জিয়া পরিবার বিভিন্ন সময়ে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে। এ বক্তব্যের মধ্যে যার কিঞ্চিৎ ফুটে উঠেছে। অনেক অজানা কথা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। এরকম অসংখ্য বিষয় আছে, যা এখনো অব্যক্ত আছে। আমরা যারা নেতা, রাজনীতি করি, এই দল থেকে আত্মমর্যাদাসহ যে সুবিধা নিতে চাই, তাদের এখন এই বক্তব্যে মর্মে মর্মে উপলব্ধি করা উচিত। যারা প্রকৃত অর্থে দলের নেতাকর্মী, এই দল থেকে যাদের সৃষ্টি, এদেশের প্রতি মিনিমাম যাদের মমত্ববোধ আছে, তারা সবাই এই বক্তব্য উপলব্ধি করে আগামী দিনে চলবেন বলে আশা করছি।’
যে বার্তা নিয়ে এলাকায় ফিরছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা : পাঁচ বিভাগের অন্তত দশজন মনোনয়নপ্রত্যাশী জানিয়েছেন, মতবিনিময় সভায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ধানের শীষের পক্ষে সব নেতাকে কাজ করার নির্দেশনাও দেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। সভায় তারেক রহমান নেতাদের ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে দলের স্বার্থে দল মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, মনোনয়ন পাওয়ার পর কোনো মিছিল, মিষ্টি বিতরণ ও ফুল বিতরণ করা যাবে না। এগুলো করলে দলের ঐক্য বিনষ্ট হবে। দলের শীর্ষ নেতার নির্দেশনা নিয়ে নিজ আসনে কাজ শুরু করতে চান তারা।
মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা আরও বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বক্তব্যে ঐক্যের বার্তার পাশাপাশি যারা এলাকায় জনপ্রিয়, বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন, নেতাকর্মীদের বিপদে-আপদে পাশে ছিলেন, তাদের মনোনয়ন দেওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। এটাই তৃণমূলের প্রত্যাশা। সত্যিকার অর্থেই যারা মাঠে ছিলেন, জিয়া পরিবারের দুর্দিনে যারা ছিলেন, তাদের মধ্য থেকেই যেন প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয়-এমন প্রত্যাশাও তাদের।
চমক ফজলুর-সরওয়ার-মঞ্জু : নানা সমালোচনার মুখে ২৬ আগস্ট বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমানের পদ তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের আগেই কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ফজলুর রহমান মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণের ডাক পান। তার এলাকার ফয়সাল আহমেদ নামে যুবদলের এক কর্মী জানান, দল যে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করেন, ফজলুর রহমানকে ডেকে দল তা আবারও প্রমাণ করেছে। এর মাধ্যমে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে ত্যাগী, জনপ্রিয় ও দলের প্রতি নিবেদিতরাই হবেন আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের কান্ডারি।
এছাড়া চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মজিবর রহমান সরওয়ারকে ফের বরিশাল মহানগরে সক্রিয় করা হয়েছে। তিনিও মতবিনিময় সভায় ছিলেন।
বরিশাল-৫ আসনে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে-এমন ইঙ্গিত দিয়ে দলের একজন নীতিনির্ধারক জানান, জনপ্রিয়তা ও ত্যাগ-এ দুই বিষয় মাথায় রেখেই মনোনয়ন দিতে চায় দল।
এদিকে নানা নাটকীয়তার পর খুলনা-২ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী নজরুল ইসলাম মঞ্জু হাইকমান্ডের ডাক পান। সর্বশেষ তিনি খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ছিলেন। দুর্দিনে দলের পাশে থাকা ত্যাগী এই নেতা গত কয়েক বছর ধরে কোনো পদে না থাকলেও বিএনপি ছেড়ে যাননি। নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সবাইকে ডেকেছেন। দল থেকে নানা কারণে ক্ষুব্ধ, বেশ কিছুদিন দূরে থাকা এবং দলের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি হওয়ায় তিনি সবাইকে কাছে টানার চেষ্টা করেছেন। নির্বাচনি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষেত্রে এ ধরনের পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং সেই কাজটা তারেক রহমান করেছেন। যে ধরনের প্রার্থী চাচ্ছেন, অর্থাৎ আন্দোলন-সংগ্রামে ত্যাগী, দলের নিবেদিতপ্রাণ, ক্লিন ইমেজ এবং জনগণের কাছে থেকে রাজনীতি করা, জনগণের প্রত্যাশিত-এমন প্রার্থী বাছাই করার চেষ্টা করছেন। এর ভেতরে থেকে যদি মনোনয়ন দেন, তাহলে সেটাই হবে দলের জন্য বড় চমক।’
মনোনয়ন ঘোষণার প্রক্রিয়া : এদিকে মঙ্গলবার রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকা হয়। এ বৈঠকে একক প্রার্থী ঘোষণা এবং জুলাই সনদ নিয়ে আলোচনা হয়। দলীয় প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত বিএনপির নেতারা জানান, তারা প্রাথমিকভাবে অন্তত ২০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন। বাকি আসনগুলোর মনোনয়ন নিয়েও কাজ চলছে। এর মধ্যে যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী ও জোট শরিকদের আসনও রয়েছে।
তারা আরও জানান, তবে তফশিল ঘোষণার পর একক প্রার্থীর নাম চূড়ান্তভাবে ঘোষণার সিদ্ধান্ত রয়েছে। এর আগে মনোনয়নপত্র বিক্রি-জমাসহ বাকি সব প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। এখন যাদের প্রাথমিকভাবে একক প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করা হবে, তাদের কর্মকাণ্ডও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। এসব প্রার্থীর মধ্যে যদি কেউ নিজ আসনে সক্রিয়ভাবে কাজ না করেন বা দলীয় নির্দেশনা মেনে না চলেন, তাহলে তাদের বাদ দিয়ে নতুন করে ফের একক প্রার্থী নির্ধারণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, সোমবার শেষদিনে সিলেট, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল ও ঢাকা বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তারেক রহমান। এর আগে রোববার রংপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও ফরিদুপরের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। পৃথকভাবে এ বৈঠকে এক হাজারেরও বেশি মনোনয়নপ্রত্যাশী অংশ নেন।
যুগান্তর থেকে নেওয়া @
দলের প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করতে চান মনোনয়নপ্রত্যাশীরা
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তারেক রহমান তার বক্তব্যে বোঝাতে চেষ্টা করেছেন- কী কষ্ট ও সংকটের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ সময় বিএনপি পার করেছে। ফলে নির্বাচনকে সামনে রেখে যদি ঐক্য না থাকে তাহলে দলের এই দীর্ঘ বছরের কষ্ট ব্যর্থ হয়ে যাবে। তার এ বক্তব্যে সব আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। দ্বন্দ্ব নিরসনে বড় নিয়ামক হিসাবে কাজ করবে। বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতারাও এমনটি মনে করছেন।
প্রসঙ্গত, মতবিনিময় সভার শেষ দিনে সোমবার রাতে তারেক রহমান মা খালেদা জিয়ার ত্যাগের কথা উল্লেখ করে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমার মাও মৃত্যুর মুখোমুখি ছিল। ইচ্ছে করলে মাকে আমি নিয়ে আসতে পারতাম। কিন্তু মাও তো আসেনি আপনাদের ছেড়ে। ৬ বার সে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছে। মৃত্যুর মুখোমুখি সত্ত্বেও মা আপনাদের ছেড়ে আসেননি। সেই মাকে সামনে রেখে আপনারা এক থাকবেন। যিনি আপনাদের জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করেছেন। যে মা তার চল্লিশ বছরের বাড়ি হারিয়েছেন। শেখ হাসিনা মাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। যে মা তার সন্তানকে হারিয়েছে। মা বুঝে সন্তান হারানোর ব্যথা। সেই মায়ের সবকিছুর মূলেই ছিল এ দেশের জনগণ। সবকিছুর মূলেই ছিল একটি গণতন্ত্রিক রাষ্ট্র। ইচ্ছে করলেই তো মা এ ব্যাপারে আপস করতে পারতেন। কিন্তু মা কোনো আপসে যাননি। তার লক্ষ্যই ছিল ঐক্যবদ্ধের মধ্য দিয়ে একটি জাতি গঠন করা। সেখানে কত ত্যাগ না স্বীকার করেছেন মা। একই সঙ্গে গণতন্ত্রের জন্য কত লোক শাহাদাত বরণ করেছে। কত লোক জেল খেটেছে, কত লোকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে মা যদি আপস করতেন তাহলে এত কষ্ট মার করতে হতো না।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্যে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন গত ১৭ বছর কী সংকটের মধ্য দিয়ে বিএনপি গিয়েছে। অন্যান্য দলে দেখা যায়, তাদের শুধু কর্মীরা ত্যাগ স্বীকার করেন। অথচ বিএনপিতে শুধু দলের কর্মীরাই ত্যাগ স্বীকার করেননি, দলের শীর্ষ নেতাও সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। এটাই তিনি বোঝাতে চেষ্টা করেছেন। বার্তা দিয়েছেন কী কষ্টের মধ্য দিয়ে, কী সংকটের মধ্য দিয়ে ১৭ বছর দলটা গেল, নির্বাচনকে সামনে রেখে যদি ঐক্য না থাকে, তাহলে দলের এই দীর্ঘ বছরের কষ্টটা ব্যর্থ হয়ে যাবে। আমার কাছে মনে হয়, অনেকের মধ্যে এই বক্তব্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কিন্তু যারা বেইমানি করবেন, তারা দলের কাছে হেরে যাবেন, এমনকি নাগরিকদের কাছেও হেরে যাবে। কারণ, দলের প্রতি মানুষের যে প্রতিশ্রুতি, এটাই খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের প্রতি মানুষের প্রতিশ্রুতি। যারা দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাবে, তাদের সাধারণ মানুষও ভালো চোখে দেখবে না। কারণ, মানুষ বেইমানদের পছন্দ করে না।’
এদিকে বৈঠক শেষে মনোনয়নপ্রত্যাশী কয়েকজন নেতা জানান, এ বক্তব্য দিতে গিয়ে তারেক রহমান আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। এ সময় উপস্থিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।
মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে আশ্বস্ত করেছি, নির্বাচন সামনে রেখে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকব এবং তার নির্দেশে সবাই এক হয়ে কাজ করব।’ তিনি বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা বলেছেন।’
নাটোর-১ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির কেন্দ্রীয় সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, ‘জিয়া পরিবার বিভিন্ন সময়ে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে। এ বক্তব্যের মধ্যে যার কিঞ্চিৎ ফুটে উঠেছে। অনেক অজানা কথা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। এরকম অসংখ্য বিষয় আছে, যা এখনো অব্যক্ত আছে। আমরা যারা নেতা, রাজনীতি করি, এই দল থেকে আত্মমর্যাদাসহ যে সুবিধা নিতে চাই, তাদের এখন এই বক্তব্যে মর্মে মর্মে উপলব্ধি করা উচিত। যারা প্রকৃত অর্থে দলের নেতাকর্মী, এই দল থেকে যাদের সৃষ্টি, এদেশের প্রতি মিনিমাম যাদের মমত্ববোধ আছে, তারা সবাই এই বক্তব্য উপলব্ধি করে আগামী দিনে চলবেন বলে আশা করছি।’
যে বার্তা নিয়ে এলাকায় ফিরছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা : পাঁচ বিভাগের অন্তত দশজন মনোনয়নপ্রত্যাশী জানিয়েছেন, মতবিনিময় সভায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ধানের শীষের পক্ষে সব নেতাকে কাজ করার নির্দেশনাও দেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। সভায় তারেক রহমান নেতাদের ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে দলের স্বার্থে দল মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, মনোনয়ন পাওয়ার পর কোনো মিছিল, মিষ্টি বিতরণ ও ফুল বিতরণ করা যাবে না। এগুলো করলে দলের ঐক্য বিনষ্ট হবে। দলের শীর্ষ নেতার নির্দেশনা নিয়ে নিজ আসনে কাজ শুরু করতে চান তারা।
মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা আরও বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বক্তব্যে ঐক্যের বার্তার পাশাপাশি যারা এলাকায় জনপ্রিয়, বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন, নেতাকর্মীদের বিপদে-আপদে পাশে ছিলেন, তাদের মনোনয়ন দেওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। এটাই তৃণমূলের প্রত্যাশা। সত্যিকার অর্থেই যারা মাঠে ছিলেন, জিয়া পরিবারের দুর্দিনে যারা ছিলেন, তাদের মধ্য থেকেই যেন প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয়-এমন প্রত্যাশাও তাদের।
চমক ফজলুর-সরওয়ার-মঞ্জু : নানা সমালোচনার মুখে ২৬ আগস্ট বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমানের পদ তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের আগেই কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ফজলুর রহমান মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণের ডাক পান। তার এলাকার ফয়সাল আহমেদ নামে যুবদলের এক কর্মী জানান, দল যে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করেন, ফজলুর রহমানকে ডেকে দল তা আবারও প্রমাণ করেছে। এর মাধ্যমে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে ত্যাগী, জনপ্রিয় ও দলের প্রতি নিবেদিতরাই হবেন আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের কান্ডারি।
এছাড়া চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মজিবর রহমান সরওয়ারকে ফের বরিশাল মহানগরে সক্রিয় করা হয়েছে। তিনিও মতবিনিময় সভায় ছিলেন।
বরিশাল-৫ আসনে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে-এমন ইঙ্গিত দিয়ে দলের একজন নীতিনির্ধারক জানান, জনপ্রিয়তা ও ত্যাগ-এ দুই বিষয় মাথায় রেখেই মনোনয়ন দিতে চায় দল।
এদিকে নানা নাটকীয়তার পর খুলনা-২ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী নজরুল ইসলাম মঞ্জু হাইকমান্ডের ডাক পান। সর্বশেষ তিনি খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ছিলেন। দুর্দিনে দলের পাশে থাকা ত্যাগী এই নেতা গত কয়েক বছর ধরে কোনো পদে না থাকলেও বিএনপি ছেড়ে যাননি। নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সবাইকে ডেকেছেন। দল থেকে নানা কারণে ক্ষুব্ধ, বেশ কিছুদিন দূরে থাকা এবং দলের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি হওয়ায় তিনি সবাইকে কাছে টানার চেষ্টা করেছেন। নির্বাচনি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষেত্রে এ ধরনের পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং সেই কাজটা তারেক রহমান করেছেন। যে ধরনের প্রার্থী চাচ্ছেন, অর্থাৎ আন্দোলন-সংগ্রামে ত্যাগী, দলের নিবেদিতপ্রাণ, ক্লিন ইমেজ এবং জনগণের কাছে থেকে রাজনীতি করা, জনগণের প্রত্যাশিত-এমন প্রার্থী বাছাই করার চেষ্টা করছেন। এর ভেতরে থেকে যদি মনোনয়ন দেন, তাহলে সেটাই হবে দলের জন্য বড় চমক।’
মনোনয়ন ঘোষণার প্রক্রিয়া : এদিকে মঙ্গলবার রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকা হয়। এ বৈঠকে একক প্রার্থী ঘোষণা এবং জুলাই সনদ নিয়ে আলোচনা হয়। দলীয় প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত বিএনপির নেতারা জানান, তারা প্রাথমিকভাবে অন্তত ২০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন। বাকি আসনগুলোর মনোনয়ন নিয়েও কাজ চলছে। এর মধ্যে যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী ও জোট শরিকদের আসনও রয়েছে।
তারা আরও জানান, তবে তফশিল ঘোষণার পর একক প্রার্থীর নাম চূড়ান্তভাবে ঘোষণার সিদ্ধান্ত রয়েছে। এর আগে মনোনয়নপত্র বিক্রি-জমাসহ বাকি সব প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। এখন যাদের প্রাথমিকভাবে একক প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করা হবে, তাদের কর্মকাণ্ডও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। এসব প্রার্থীর মধ্যে যদি কেউ নিজ আসনে সক্রিয়ভাবে কাজ না করেন বা দলীয় নির্দেশনা মেনে না চলেন, তাহলে তাদের বাদ দিয়ে নতুন করে ফের একক প্রার্থী নির্ধারণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, সোমবার শেষদিনে সিলেট, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল ও ঢাকা বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তারেক রহমান। এর আগে রোববার রংপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও ফরিদুপরের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। পৃথকভাবে এ বৈঠকে এক হাজারেরও বেশি মনোনয়নপ্রত্যাশী অংশ নেন।
যুগান্তর থেকে নেওয়া @
জুলাই আন্দোলনের ১২৮ যোদ্ধার গেজেট বাতিল
নির্বাচন বানচালে ছোটখাটো নয় বড় শক্তি কাজ করবে : প্রধান উপদেষ্টা
আমাদের উন্নয়নের দর্শন বদলাতে হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা
নতুন ইউনিফর্ম পাচ্ছে ৩ বাহিনী
গাজায় ‘শক্তিশালী’ বিমান হামলায় ৩০ ফিলিস্তিনি নিহত
সত্যিই কী শেখ হাসিনা মারা গেছেন, যা জানা গেল
রাবি শিক্ষক মামুনের কটূক্তির কড়া জবাব দিলেন মোনামি
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা, আদেশে কী আছে?