আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ঘোষিত চট্টগ্রামের ১০টি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় সমন্বয় ঘটেছে নবীন ও প্রবীণের। এর মধ্যে পাঁচ আসনে প্রবীণ অর্থাৎ অতীতেও দলের প্রার্থী হয়েছেন এমন নেতৃবৃন্দের উপর আস্থা রেখেছে দলটি। বাকি পাঁচ আসনের সবাই নতুন, যাদের সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অভিজ্ঞতা নেই। নতুন মুখের নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এমন আসনগুলোর মধ্যে দুইটিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি) শরীক দলকে ছেড়ে দেয় বিএনপি। এছাড়া একাদশ সংসদ নির্বাচনের দুই প্রার্থী নতুন মুখের কারণে এবার সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে চট্টগ্রামসহ সারা দেশের ২৩৭টি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এতে চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে ১০টিতে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়। ঘোষণা করা হয়নি ৬টি আসনের প্রার্থীর নাম। এর মধ্যে একটি আসনে জোটকে ছেড়ে দেয়া হবে। একটিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে আপাতত ঘোষণা করা হয়নি। সেটিসহ ৫ আসনে পরবর্তী ধাপে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবে বিএনপি।

এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যেসব আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি সেখানে বিএনপির সাথে যুগপৎ আন্দোলন করেছে এমন দলগুলো থেকে আসতে পারে। অথবা আমরাও চেঞ্জ করতে পারি। আমরা যেটা ঘোষণা করলাম এটা সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা। স্থায়ী কমিটি যে কোনো সময় প্রয়োজনে এটা পরিবর্তন করতে পারে।

যে ৫ আসনে বিএনপি প্রবীণের উপর আস্থা রেখেছে সেগুলো হচ্ছে– চট্টগ্রাম–১০ (ডবলমুরিং–পাহাড়তলী–হালিশহর–খুলশী) আসনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম–১ (মীরসরাই) আসনে উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন, চট্টগ্রাম–৮ (বোয়ালখালী–চান্দগাঁও–পাঁচলাইশ ও বায়েজিদ (আংশিক) আসনে নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, চট্টগ্রাম–১২ (পটিয়া) আসনে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম ও চট্টগ্রাম–১৩ (আনোয়ারা–কর্ণফুলী) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম।

এর মধ্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম–১১ আসনে দলের প্রার্থী ছিলেন। এর আগে ১৯৯১ সালে তৎকালীন নির্বাচনী এলাকা–৮, (ডবলমুরিং, পাহাড়তলী, বন্দর) থেকে বেগম খালেদা জিয়া সংসদ সদস্য প্রার্থী হয়েছিলেন। ওইসময় আমীর খসরু বেগম জিয়ার সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীকালে একই বছরে নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম–৮ এর উপ–নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আমীর খসরু সংসদ সদস্য হিসেবে একই এলাকা থেকে নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমীর খসরু পরাজিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় নি বিএনপি।

এছাড়া এরশাদ উল্লাহ ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম–৮ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। অবশ্য সেবার হেরে যান তিনি। এছাড়া নুরুল আমিন ও এনামুল হক এনাম ২০১৮ সালে অনুৃষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন বিএনপির।

এছড়া সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম ২০১৮ একাদশ সংসদ নির্বাচনেও বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। এছাড়া ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন (ষষ্ঠ ও সপ্তম) ও ২০০১ সালে অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন।

পাঁচ নতুন মুখ :

চট্টগ্রাম–২ (ফটিছড়িতে) আসনে উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সরওয়ার আলমগীর, চট্টগ্রাম–৪ (সীতাকুণ্ড ও চসিকের ৯ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ড) আসনে উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী সালাউদ্দিন, চট্টগ্রাম– ৫ (হাটহাজারী) আসনে বিএনপির সহ–সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম–৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম–১৬ (বাঁশখালী) আসনে দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পাকে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সম্ভব্য প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরা সবাই নতুন, অর্থাৎ পূর্বে তাদের সংসদ নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা নেই। এই ৫ জনের মধ্যে তিনজন আবার সাবেক তিন মন্ত্রীর সন্তান।