দুর্নীতি প্রমাণিত হলে আদানির বিদ্যুৎ চুক্তি বাতিল করবে অন্তর্বর্তী সরকার

দুর্নীতি প্রমাণিত হলে আদানির বিদ্যুৎ চুক্তি বাতিল করবে অন্তর্বর্তী সরকার

কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি প্রমাণিত হলে ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে করা বিদ্যুৎ চুক্তি বাতিলে দ্বিধা করবে না বাংলাদেশ, এমনটাই জানিয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। জ্বালানি খাতে ‘বহুল প্রশাসনিক ব্যর্থতা’ ও ‘ব্যাপক দুর্নীতির’ অভিযোগে গঠিত জাতীয় পর্যালোচনা কমিটি ‘অন্তর্বর্তীকালীন গোপনীয় প্রতিবেদন’ জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতেই এই শক্ত অবস্থানের কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

মঙ্গলবার টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রকাশিত প্রতিবেদন বলা হয়, ২০১৭ সালে আদানি গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পতিত শেখ হাসিনা সরকারের সময় করা বিদ্যুৎ খাতের চুক্তিগুলো যাচাইয়ের জন্যই এই কমিটি গঠিত হয়েছিল।

বিদ্যুৎ খাতের চুক্তি পর্যালোচনার জন্য গঠিত জাতীয় কমিটির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ শাসনামলে বিদ্যুৎ খাতের বেশিরভাগ চুক্তিতে বেসরকারি কোম্পানি, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং আমলাদের একটি চক্রের যোগসাজশ ছিল। সেই চক্রের নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রীও ছিলেন। তা ছাড়া, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কিছু কর্মকর্তা বিদ্যুৎ খাতের চুক্তিতে বারবার হস্তক্ষেপ করেছিলেন।

প্রতিবেদনে কমপক্ষে সাবেক দুই বিদ্যুৎ সচিব আবুল কালাম আজাদ ও আহমদ কায়কাউসের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যারা পরে পদোন্নতি পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব হন।

পর্যালোচনা কমিটির প্রধান ও সাবেক বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী রোববার জানান, ‘বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় আমরা ব্যাপক দুর্নীতি, যোগসাজশ, জালিয়াতি, অনিয়ম ও অবৈধতার প্রমাণ পেয়েছি।’

প্যানেলের সঙ্গে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, চুক্তিতে দুর্নীতির অভিযোগ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বাতিলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত নয়। তবে অভিযোগ প্রমাণিত হলে চুক্তি বাতিল করা সম্ভব। তার ভাষায়, ‘মৌখিক নিশ্চয়তা আদালতে চলবে না; সুনির্দিষ্ট আইনি ভিত্তি থাকতে হবে।’

উচ্চ আদালতে আদানির বিদ্যুৎ কেনা নিনিয়ে একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বিদ্যুৎ বিভাগ দুর্নীতির প্রমাণ সংগ্রহে কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

আদানি পাওয়ার ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) মধ্যে ২৫ বছরের ওই চুক্তিতে বলা হয়, ঝাড়খণ্ডে আদানির স্থাপিত ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত শতভাগ বিদ্যুৎ বাংলাদেশকে নিতে হবে। এই কেন্দ্রটি একচেটিয়াভাবে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে নির্মিত হয়। আর এ কারণেই চুক্তিটি হাসিনা সরকারের পতনের পর তদন্তের মুখে পড়ে।

কমিটির সদস্য মুশতাক হোসেন খান সতর্ক করে বলেন, এটি একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রীয় চুক্তি, তাই ইচ্ছামতো বাতিল করা সম্ভব নয়। এমন সিদ্ধান্ত নিলে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বড় অঙ্কের জরিমানার ঝুঁকি রয়েছে।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে গঠিত এই কমিটি প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দিতে প্রায় ১৪ মাস সময় নিয়েছে। আগামী জানুয়ারিতে কার্যক্রম শেষ হবে বলে তারা আশা করছে।

কমিটির প্রধান বলেন, কমিটিকে ২০১০ সালের ‘কুইক এনহ্যান্সমেন্ট অব ইলেকট্রিসিটি অ্যান্ড এনার্জি সাপ্লাই (স্পেশাল প্রোভিশন) অ্যাক্ট’ (বর্তমানে বাতিল)-এর আওতায় স্বাক্ষরিত বেশিরভাগ বিদ্যুৎ চুক্তির অনেক নথি, প্রক্রিয়াগত কাগজপত্র, অর্থ পরিশোধের বিবরণ এবং উৎপাদন তথ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়েছে। এতে দীর্ঘ সময় লেগেছে।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp
Share on email