গবেষণা : টি-ব্যাগে বিপজ্জনক ভারী ধাতু, স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা

গবেষণা : টি-ব্যাগে বিপজ্জনক ভারী ধাতু, স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা
twitter sharing button
বাজারে বিক্রি হওয়া টি-ব্যাগগুলোতে বিপজ্জনক ভারী ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে এনভায়রনমেন্ট ও সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো)।

সংস্থাটির একটি গবেষণা প্রতিবেদন ‘ব্রিউইং টক্সিনস: টি-ব্যাগ ও চা পাতায় মিশে থাকা বিপজ্জনক ভারী ধাতুর ঝুঁকি উন্মোচন’-এ এই তথ্য উঠে আসে।

প্রতিবেদনের ফলাফল অনুযায়ী, বাংলাদেশে টি-ব্যাগে থাকা বিপজ্জনক ভারী ধাতুর মাত্রা নিরাপদ মাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত। দেশের অধিকাংশ মানুষের দিনে একাধিকবার চা পানের অভ্যাসের কারণে এটি ভয়ানক স্বাস্থ্যঝুঁকির ইঙ্গিত দেয়।

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে এসডোর প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

এসডোর এই গবেষণায় স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করা ১৩টি নমুনা (১২টি টি-ব্যাগ এবং একটি চা পাতা) পরীক্ষায় দেখা গেছে, টি-ব্যাগের প্যাকেজিংয়ে বিপজ্জনক মাত্রায় ভারী ধাতু রয়েছে। পরীক্ষায় টি-ব্যাগের প্যাকেজিংয়ে ক্রোমিয়াম সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬৯০ পিপিএম (নিরাপদ সীমা ৫ পিপিএম), সীসা ৫১ পিপিএম পর্যন্ত (সীমা ৫ পিপিএম), পারদ ১০৮ পিপিএম পর্যন্ত (সীমা ০.৩ পিপিএম), এবং আর্সেনিক ১৪ পিপিএম (সীমা ২ পিপিএম) পাওয়া গেছে।

টি-ব্যাগে এ ধরনের ভারী ধাতুর উপস্থিতি নিয়মিত চা পানকারীদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে।

গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এসডোর চেয়ারম্যান সৈয়দ মার্গুব মোরশেদ বলেন, এটি ভোক্তা অধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন। আমরা অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাই।

গবেষণায় টি-ব্যাগ থেকে চা পাতা আলাদা করার পর ভারী ধাতু অ্যান্টিমনি (সর্বোচ্চ ১৫৪ পিপিএম) পাওয়া গেছে। পাশাপাশি নগণ্য পরিমাণে ইউরেনিয়াম ও থোরিয়াম শনাক্ত হয়েছে।

ইতিবাচকভাবে, চা পাতার পরীক্ষায় আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, জিঙ্ক এবং কোবাল্টের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানও পাওয়া গেছে, যা সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ।

এই প্রতিবেদনে বৈজ্ঞানিক গবেষণার পাশাপাশি জাতীয় পর্যায়ে ৩ হাজার ৫৭১ জনের মতামত সংগ্রহ করা হয়, যা দেশের সাধারণ মানুষের চা পানের অভ্যাস ও চা কেনার সচেতনতা তুলে ধরে।

জরিপে দেখা যায়, ৫৫ শতাংশ মানুষ প্রতিদিন ২ থেকে ৩ কাপ এবং ২৭ শতাংশ মানুষ প্রতিদিন ৪ বা তারও বেশি কাপ চা পান করেন। কিন্তু মোট উত্তরদাতাদের মধ্যে মাত্র ১ শতাংশ মানুষ ধারণা রাখেন টি-ব্যাগে ভারী ধাতু থাকতে পারে।

এসডোর সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার ড. শাহরিয়ার হোসেন, বলেন, এ গবেষণা আমাদের খাদ্যশৃঙ্খলে বিষাক্ত ভারী ধাতু প্রবেশ করার পথ রোধ করার একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচনা। আমাদের উদ্দেশ্য দোষারোপ নয় বরং নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে যৌথভাবে সংকট মোকাবিলা করা।

এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানা বলেন, যদি আমরা চায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারি তাহলে এটি মানুষের জন্য শারীরিক ঝুঁকি তো বটেই, মানসিক চাপও তৈরি করবে। আমরা সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এই গবেষণায় দুটি ধাপ অনুসরণ করা হয়েছে– জনগণের সচেতনতা বোঝার জন্য ভোক্তা জরিপ এবং এক্স-রে ফ্লুরোসেন্স প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরীক্ষাগারে ধাতুর মাত্রা নির্ধারণ।

এই যুগান্তকারী গবেষণা কেবল জনস্বাস্থ্য সতর্কবার্তাই নয়, বরং ভোক্তার অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জরুরি আহ্বান জানানো হয়।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp
Share on email