
বিএনপি অভিযোগ করেছে, ঐকমত্য কমিশন সনদের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তাদের দেওয়া ‘নোট অব ডিসেন্ট’ অর্থাৎ ভিন্নমতগুলো পুরোপুরি উপেক্ষা করেছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) যখন ঐকমত্য কমিশন প্রতিবেদন প্রকাশ করল, আমরা বিস্ময়ে দেখেছি, আমাদের দেওয়া নোট অব ডিসেন্ট বাদ দেওয়া হয়েছে। এটা জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রতারণা।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রক্রিয়া সংশোধন না করলে ঐকমত্য নয়, বিভেদই তৈরি হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদও একধাপ এগিয়ে বলেন, ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদের প্রস্তাব কিংবা উচ্চকক্ষে আসন বণ্টনের পদ্ধতি নিয়ে কোনো ঐকমত্য হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘এসব আরোপিত প্রস্তাব জাতিতে ঐক্যের বদলে বিভক্তি আনবে।’
অন্যদিকে এনসিপি বলছে, তাদের অনড় অবস্থানের কারণেই ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা সুপারিশ করেছে। দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারি বলেন, ‘আমরা চাই সরকার কমিশনের প্রথম খসড়াটি গ্রহণ করুক। তা হলেই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত হবে।’
জামায়াতে ইসলামী বলছে, গণভোট ছাড়া সনদ বাস্তবায়নের কোনো আইনগত ভিত্তি থাকবে না। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘সরকার গণভোটের তারিখ ঘোষণায় যত দেরি করবে, জাতীয় নির্বাচন তত পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়বে।’
একই সুরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব ইউনুছ আহমাদও বলেন, ‘গণভোট ছাড়া কোনো সনদ বাস্তবায়নের অর্থ জনগণের মতামত উপেক্ষা করা।’
তবে বিএনপি চায় জাতীয় নির্বাচনের দিনে গণভোট। এনসিপি অবশ্য এ নিয়ে কোনো শক্ত অবস্থান নেয়নি। তবে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনের সময় নিয়ে সংশয় উসকে দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণহত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়।’ রংপুরে দলীয় কর্মসূচিতে মঙ্গলবার তিনি বলেছেন, ‘এই বিচার না হলে নির্বাচন কেবলই আনুষ্ঠানিকতা হবে, যার কোনো অর্থ থাকবে না।’ নাহিদের বক্তব্যে ইঙ্গিত মিলছে; সনদের বাস্তবায়ন বিলম্বিত হলে নির্বাচনের সময়ও অনিশ্চিত হয়ে উঠতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি বলছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের নামে সরকার বিভ্রান্তি তৈরি করছে এবং এর দায় সরকারকেই নিতে হবে। বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। নির্বাচনে যদি ব্যত্যয় ঘটে, তার দায় ড. ইউনূস সরকারের নিতে হবে।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক অনৈক্য যদি বাড়তে থাকে, তা জাতীয় নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমানের আশা, ‘গণভোট ও জুলাই সনদ নিয়ে ভিন্নমত থাকলেও শেষ পর্যন্ত দলগুলো সমঝোতায় আসবে বলেই মনে হয়। সবাই জানে, এই মুহূর্তে ঝুঁকি সবারই সমান।’







