
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ২ নম্বর গেট এলাকায় স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনার পেরিয়েছে দুই দিন। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় সংঘর্ষ এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়টির পার্শ্ববর্তী এলাকায় জারি করা হয়েছিল ১৪৪ ধারা মোতায়েন করা হয়েছিল যৌথ বাহিনী। তবে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় ৩ সেপ্টেম্বর (বুধবার) থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নিয়মিত একাডেমিক কার্যক্রম সচল হয়েছে। নয়টি বিভাগে চলমান রয়েছে পরীক্ষা এছাড়াও নিয়মিত ক্লাস শুরু হয়েছে নানান বিভাগে।
গত শনিবার দিবাগত রাত থেকে স্থানীয় দুর্বৃত্তদের দ্বারা ক্রমাগত হামলার শিকার হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রক্তক্ষয়ী এই সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রায় পনেরশো শিক্ষার্থী হতাহত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির মেডিকেল সেন্টারের সিনিয়র মেডিকেল অফিসারের কাছ থেকে। আহতদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে অন্তত শতাধিক শিক্ষার্থী এবং আরও ৩ শিক্ষার্থী রয়েছে মরণাপন্ন পরিস্থিতিতে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী ইমতিয়াজের জ্ঞান ফেরেনি ৭৩ ঘন্টা পার হয়ে যাওয়ার পরেও। মূলত রাতে বিশ্ববিদ্যালয়টির এক নারী শিক্ষার্থী তার ভাড়া ফ্ল্যাট বাসায় প্রবেশ করতে গেলে তাকে মারধর করে বাসাটির দারোয়ান। এবং এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের হামলার সূত্রপাত।
উক্ত ঘটনার পর ৩ সেপ্টেম্বর (বুধবার) থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্লাসে ফিরতে শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। তবে ক্যাম্পাসে নেই পুরনো সেই শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতি। আড্ডা মুখোর ক্যাম্পাসের ঝুপড়িগুলো পড়ে আছে শিক্ষার্থী শূন্য। হাতেগোনা কয়েকটি বিভাগে ক্লাস পরীক্ষা সচল থাকলেও কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ, বিজ্ঞান অনুষদ, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ সহ অন্যান্য অনুষদের অধিকাংশ বিভাগের ক্লাসগুলো পড়ে আছে ফাঁকা। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, তারা এখনো ভীত সন্ত্রস্ত এবং উক্ত ঘটনার ভয়াবহ ট্রমা তারা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়টির যেসকল অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা ২নং গেট সহ জোবড়া গ্রামে এতদিন বসবাস করে আসছিল তারা আবাসন সংকটের পাশাপাশি ভুগছেন নিরাপত্তাহীনতায়। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীরা সব থেকে বেশি আতঙ্কগ্রস্থ। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির একাধিক নারী শিক্ষার্থী জানিয়েছে তাদেরকে নানান মাধ্যমে ধর্ষণ সহ বিভিন্ন হুমকি প্রদান করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্রী সুমাইয়া সিকদার দৈনিক দিনকালের চবি প্রতিনিধি আল ইয়ামিম আফ্রিদি কে জানান, আমরা এই বিষয় গুলোর নিষ্পত্তি চাই। এগুলো আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যারা ২ নং গেট এলাকায় ছিল তারা ঐ এলাকায় ঢুকতেই পারতেছে না। বাসার নিচে এসে মুখে কাপড় বেঁধে হুমকি দিয়ে চলে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এই বিষয় টা তো কন্টিনিউ চলতে পারেনা। আমাদের তো নিরাপত্তার একটা বিষয় আছে। আর এটাতো একটা ছেলে খেলা না যে গ্যাং রেপ করে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে, প্রশাসনের তো এই বিষয়গুলো দেখতে হবে।
শিক্ষার্থীদের স্বল্প উপস্থিতির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল আমীন দৈনিক দিনকালের চবি প্রতিনিধি আল ইয়ামিম আফ্রিদি কে জানান, আমাদের শিক্ষার্থীরা কিছুটা ট্রমায় আছে, এটা তো অস্বীকার করা যাবে না। এত বড় একটি ঘটনা ঘটার পরে আমরা সকিং পিরিয়ডের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। ইনশাল্লাহ আশা করি রবিবার থেকে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের সিরিয়াস উপস্থিতি বাড়বে।
সংঘর্ষের ঘটনার পর পরীক্ষা সম্পর্কিত বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন গণমাধ্যমে জানান, ৯টি বিভাগে পরীক্ষা চলছে। তবে আমরা বিভাগগুলোতে স্বাধীনতা দিয়েছে, তারা শিক্ষার্থীদের মানসিকতার ওপর ভিত্তি করে পরীক্ষা নিতেও পারেন, আবার বন্ধও রাখতে পারেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান গণমাধ্যমে জানান, এখন থেকে ক্লাস নিয়মিত চলবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী আহতরাও পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে।