
কয়েক দশক আগে কিংবা মাত্র কয়েক বছর আগে—যে সময়েই হোক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মনে আজও রয়ে গেছে ঝুপড়ি, হলের করিডর কিংবা স্টেশনের আড্ডা।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) সেই স্মৃতির ভান্ডার যেন হঠাৎ করেই খুলে গেল। এদিন নগরীর অভিজাত জিইসি কনভেনশন সেন্টারে মিলিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় চার হাজার প্রাক্তন শিক্ষার্থী।
দুপুর আড়াইটায় শুরু হয়ে অনুষ্ঠানটি রাত সাড়ে ১১টায় শেষ হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টাজুড়ে চলা পুনর্মিলনী যেন হয়ে উঠে অতীত আর বর্তমানের এক অদ্ভুত মেলবন্ধন। প্রবীণ-তরুণ প্রাক্তনরা খুঁজে নিলেন পুরোনো সহপাঠীদের। কেউবা বিস্ময়ে তাকালেন, সময়ের এত দীর্ঘ ব্যবধানও যে এক মুহূর্তে মিলিয়ে যেতে পারে।
মঞ্চে উঠে আসা প্রাক্তনদের কণ্ঠে ধ্বনিত হলো স্মৃতির আবহ। কেউ বললেন আন্দোলন-সংগ্রামের দিনের কথা, কেউ স্মরণ করলেন বন্ধুত্বের প্রথম সকাল। আবার কেউ ঝুপড়িতে পাওয়া প্রেম কিংবা বন্ধুর সঙ্গে কাটানো বিকেল স্মরণ করে চোখের পানি মুছলেন অগোচরে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ সম্মান জানানো হয় জুলাই আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের। স্মরণ করা হয় সব শহীদকে। সেই মুহূর্তে হলে যেন ভেসে উঠল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের দিনগুলোর প্রতিধ্বনি।
রাত বাড়ছিল, কিন্তু বিদায়ের সময় কেউই যেন চাইছিলেন না। কনভেনশন হলজুড়ে তখনও সেলফির ঝলকানি, আড্ডা আর আনন্দ। যেন সবাই মনে মনে বলে উঠলেন—চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেবল একটি প্রতিষ্ঠান নয়, এটি আজীবনের সম্পর্কের বন্ধন।
অ্যালামনাই এসোসিশনের আহ্বায়ক লায়ন আসলাম চৌধুরী বলেন, এই পুনর্মিলনী কেবল স্মৃতিচারণ নয়, বরং প্রাক্তনদের ভ্রাতৃত্ববোধ ও পারস্পরিক সহযোগিতার নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে সকলে মিলে অবদান রাখার অঙ্গীকারও করেন তারা।
বিকাল ৩ টায় বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশনের এডহক কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ আসলাম চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পুনর্মিলনী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ একরামুল করিম, এডহক কমিটির সদস্য মাহবুবের রহমান শামীম, এম এ হালিম, পুনর্মিলনী কমিটির সদস্য সচিব কামরুল হাসান হারুন। আরও ছিলেন এম ডি ফখরুল ইসলাম, শাহ মোহাম্মদ, সেলিম, ইফতেখার হোসেন চৌধুরী মহসিন, কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু, আমজাদ হোসেন চৌধুরী সোহরাব হোসেন সোহেল, আবুল বাশার, হাফিজ আল আসাদ, কামরুল মেহেদী, দাউদ আব্দুল্লাহ হারুন, মজুমদার শাহীন, মোর্শেদুল আলম, আতিক উল্ল্যাহ, আবু সাঈদ, রেজোয়ান সিদ্দিকী মামুনুর রশীদ, শাহেদুল ইসলাম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন হতে তেলাওয়াত করেন ৩০ ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থী এডভোকেট আবু সাঈদ। এরপর জুলাই শহীদদের স্মরণে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন পুনর্মিলনীর যুগ্ম সদস্য সচিব এম ডি ফখরুল ইসলাম। এ সময় শহীদ ফরহাদ হোসেন ও হৃদয় চন্দ্র তড়ুয়া, চট্টগ্রাম কলেজ শিক্ষার্থী ওয়াসিম আকরামসহ জুলাই শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরবর্তীতে জুলাই শহীদ পরিবারকে সম্মাননা স্মারক ও সম্মানি প্রদান করা হয়।
উদ্বোধনী নৃত্যের মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে নাচ, গান, আবৃত্তি, কৌতুকসহ নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিবেশিত হয়। সংগীত পরিবেশন করেন শাহরিয়ার খালেদ, ইকবাল হায়দার, জাকিয়া সুলতানা, হোসাইন মাসুদ, সালাুদ্দীন মামুন, শাহেদুল কবির, সাগর বড়ুয়া, সোমা রায় প্রমুখ। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন হাফিজ আল আসাদ, নাসরিন ইসলাম, নাজনীন আকতার রেখা, দিলরুবা খানম ছুটি। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের তত্বাবধানে ছিলেন হানিফা নাজিবা হেনা। কুমিল্লা হতে প্রাক্তনীদের সমন্বয়ে শিল্পীদের একটি দলও অংশ নেন। দলীয় সংগীত পরিবেশন করেন সাব্বির ও পুতুল।
শেষ পর্বে র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যা ৭টায় অনুষ্ঠিত হয় এডহক কমিটি ও পুনর্মিলনী কমিটির পরিচিতি পর্ব শেষে পুনর্মিলনী কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব এম ডি ফখরুল ইসলামের সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন ছাত্র সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম আকবর খোন্দকার, চবি এলামনাই এসোসিয়েশনের এডহক কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ আসলাম চৌধুরী, পুনর্মিলনী কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ একরামুল করিম, সদস্য মাহবুবের রহমান শামীম, এম এ হালিম ও পুনর্মিলনী কমিটির সদস্য সচিব কামরুল হাসান হারুন।