
আশ্রয়হীনদের মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর গুলো এখন ফাঁকা, থাকেন না উপকারভোগীদের কেউ। ফলে আশ্রায়ণ প্রকল্পের ঘর গুলো মাদক সেবীদের নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত হয়েছে। রাতে সন্ত্রাসী, মাদকসেবী, জুয়াড়ী নিয়মিত আসা যাওয়াসহ প্রতিদিন বসে কোটি টাকার জুয়া, মাদকসেবনের আসর।
বুধবার (২২ অক্টোবর) সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার লালানগর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের চাঁদনগর এলাকায় নির্মিত ছয়টি আশ্রয়ণের ঘর দীর্ঘদিন ধরে তালাবদ্ধ। বসবাস করছেন না প্রকৃত বা বরাদ্দপ্রাপ্ত উপকারভোগীরা। ফলে ফাঁকা ঘরগুলোর দখল নিয়েছে স্থানীয় মাদকসেবীরা। রাত নামলেই এসব ঘর বসে জুয়া, মাদকসেবনের আসর বসে। তবে ছয়টি ঘরের মধ্যে দুটি ঘরে বর্তমানে দুই পরিবার বসবাস করছে। তাদের কেউ রাঙ্গুনিয়ার বাসিন্দা নয় এবং বরাদ্দপ্রাপ্ত উপকারভোগীও নয়। তাদের একজনের বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়ায়, অন্যজনের বাড়ি নোয়াখালী জেলায়। বাকি ৪টি ঘর তালাবদ্ধ।
এব্যাপারে একটি ঘরে বসবাসকারী চকরিয়ার বাসিন্দা মো. শাহ আলম জানান,
“আমি দীর্ঘদিন যাবত এই এলাকায় থাকতাম। গত এক বছর ধরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় এখানে থাকছি। মূলত আমি পঙ্গু, ঘরটি খালি থাকায় স্থানীয়রা আমাকে থাকতে দিয়েছেন।”
অপর একটি ঘরে বসবাসকারী নোয়াখালীর বাসিন্দা ফাহেতা আক্তার বলেন, “আমরা এই ঘরের প্রকৃত মালিক নই। প্রকৃত মালিক আবদুস শুক্কুর, গত চার বছর আগে রাণীরহাট ভূমি অফিসের তহসিলদার একরাম নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে ঘরটি আমাদের দিয়েছেন।”
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে উঠে আসে ভিন্ন তথ্য। খালি থাকা প্রায় সব ঘরেই স্থানীয় কয়েকজন তালা লাগিয়ে রেখেছেন দীর্ঘদিন ধরে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, প্রকৃত মালিকরা দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকায় ঘরগুলো যাতে অন্য কেউ দখল না নেয় এবং ঘরে জুয়া, মাদকসেবন বন্ধ ও অসামাজিক কার্যকলাপ যাথে নাহয় সেই উদ্দেশ্যে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
এ সময় স্থানীয়রা আরও জানান, পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের মনোয়ারা বেগম নামে এক উপকারভোগী নারী ঘর বরাদ্দপ্রাপ্ত হলেও তিনি ঘরে থাকেন না। সম্প্রতি তিনি এসে তার নিজের ঘরে দেওয়া তালা ভেঙে প্রবেশ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে মনোয়ারা বেগম বলেন, “আমার উপযুক্ত মেয়ে থাকায় এবং পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় আমি ছয় মাস আগে মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে সেখান থেকে আমার বাবার বাড়ি (রাজানগর, শিয়াল বুক্কা) চলে আসি। আমি এর আগে চার বছর সেখানে ছিলাম। পরে মেয়ের বিয়ে দিয়ে গিয়ে দেখি আমার ঘরে তালা দেওয়া। আমি থালা ভেঙ্গে ঘরে ডুকি।”
এ বিষয়ে রাণীরহাট ভূমি অফিসের তহসিলদার মোজাহেদুল ইসলাম বলেন, “ওখানে ছয়টি ঘরের মধ্যে দুটি পরিবারের মূল মালিক মারা গেছেন। যতটুকু জানি, একটি পরিবার বৈধভাবে সেখানে আছেন। বাকিদের সম্ভবত বৈধ কাগজ নেই।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসন করা। কিন্তু প্রকৃত উপকারভোগীরা ঘরে না থাকায় সেখানে আমরা বাইরের দুই অসহায় পরিবারকে থাকতে দিয়েছি। তাদের দাবি, খালি ঘরগুলো প্রকৃত ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে পুনর্বণ্টন করা উচিত। প্রকৃত ভূক্তভোগীরা ঘর বরাদ্দ পায়নি। পেয়েছেন তৎকালীন আওয়ামীলীগের লোকজন ও জনপ্রতিনিধিদের পছন্দের লোকজন। তাদের বরাদ্দ বাতিল করে নতুনভাবে স্থানীয় ভুমিহীন ও গৃহহীনদের বরাদ্দ দেওয়া জন্য প্রশাসনের নিকট দাবি করেন। এ ছাড়াও মাদকসেবীর আড্ডাসহ বিভিন্ন অপকর্ম বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়াও দাবি জানান।
এ বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শিফাতুল মাজদা’র বলেন, ‘মাদক ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধে পুলিশ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে। খোজখবর নিয়ে আশ্যয়ণ প্রকল্প গুলোতে শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে।’
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘বিষয়টি আজকে অবগত হলাম। দীর্ঘদিন ধরে যদি ঘরের প্রকৃত মালিক সেখানে অনুপস্থিত থাকেন, তাহলে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। বরাদ্দ পাওয়ার পরও যারা ঘরে থাকছেন না, তাদের দলিল বাতিল করে নতুনদের বরাদ্দ দেওয়া হবে।’







