এটি প্রথমবারের মতো বিএনপির কোনো শীর্ষ নেতা সরাসরি নভেম্বর মাসের নাম উল্লেখ করে তারেক রহমানের ফেরার ইঙ্গিত দিলেন। এর আগে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্য নেতারা শুধু ‘শিগগিরই ফিরবেন’ এমন সাধারণ মন্তব্যে সীমাবদ্ধ ছিলেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, সালাহউদ্দিন আহমদের এই মন্তব্য শুধু তথ্য নয়—এটি দলের ভেতরে আত্মবিশ্বাস ও প্রস্তুতির ইঙ্গিতও বহন করে।
নির্বাচনী সমীকরণে তারেক রহমান
তারেক রহমান দেশে ফিরলে তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন, এমনটিও ইঙ্গিত দিয়েছেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তাঁর ভাষায়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অবশ্যই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। আসন পরে নির্ধারিত হবে। বাংলাদেশের যেকোনো আসন থেকেই তিনি নির্বাচন করতে পারেন।
দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না—এই প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা আশা করছি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নিজের শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা তো চাই তিনি নির্বাচনে অংশ নিন।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, মা ও ছেলে উভয়ের অংশগ্রহণ হলে বিএনপির নির্বাচনী তৎপরতা একেবারে নতুন গতি পাবে।
জাতীয় পার্টি ও জোট রাজনীতি
জাতীয় পার্টির অবস্থান নিয়েও মন্তব্য করেছেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তাঁর মতে, জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ কোনো রাজনৈতিক দল নয়। তাদের রেজিস্ট্রেশন বহাল আছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো মামলা নেই। তারা নির্বাচনে অংশ নেবে কি নেবে না, সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার।
তবে তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগের তো কোনো রেজিস্ট্রেশন এখন নাই… তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার মামলার তদন্ত চলছে।
এই বক্তব্যে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন, যা নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ঘিরে বিতর্ককে আরও তীব্র করতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
আরপিও সংশোধনীতে আপত্তি
নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনী নিয়েও আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি। সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, তাঁরা সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে এই খসড়ার সংশোধন দাবি করবেন।
খসড়াটিতে বলা হয়েছে, কোনো দল জোটগতভাবে নির্বাচনে গেলেও নিজ নিজ প্রতীকে অংশ নিতে হবে। এ বিষয়ে বিএনপির আপত্তি জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, এভাবে প্রতীক আলাদা রাখলে ছোট দলগুলো জোটবদ্ধ হতে উৎসাহিত হবে না। আমাদের কোনো সম্মতি ছাড়াই একতরফাভাবে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।
২০০ প্রার্থীকে গ্রিন সিগন্যাল
আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য জানান, চলতি অক্টোবরের মধ্যেই প্রায় ২০০ আসনে একক প্রার্থীকে ‘গ্রিন সিগন্যাল’দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দিনরাতই নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। নির্বাচনের আগে তাদের সঙ্গে কথা হওয়াই স্বাভাবিক।
এর মাধ্যমে বোঝা যায়, বিএনপি আগাম নির্বাচনী প্রস্তুতির পাশাপাশি সাংগঠনিক কাঠামোও শক্ত করছে।
নতুন জোটের সম্ভাবনা
জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নিয়ে জোট গঠনের প্রশ্নে সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, এখনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি, তবে ‘রাজনৈতিক যোগাযোগ আছে।’ এতে ধারণা মিলছে, বিএনপি বিকল্প জোট গঠনের সম্ভাবনা খোলা রেখেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা প্রসঙ্গ
অন্তর্বর্তী সরকারের দুই ছাত্র উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাঁরা ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে আছেন। যদি নির্বাচন করতে চান, তবে নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত কবে তাঁরা সরকার থেকে সরে আসবেন।
এই বক্তব্যকে রাজনৈতিক শিষ্টাচারের সীমায় রাখা হলেও এতে বিএনপির নির্বাচনী নীতিগত অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে—সরকারে থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়াকে দলটি সমর্থন করে না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তারেক রহমানের দেশে ফেরার ঘোষণা কেবল বিএনপির কর্মীদের উজ্জীবিত করবে না, বরং নির্বাচনের প্রাক-মাঠে নতুন উত্তাপ তৈরি করবে। দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে থাকা অবস্থায় অনলাইনে দলের কার্যক্রম পরিচালনা করলেও, তাঁর সরাসরি উপস্থিতি বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে পারে। একই সঙ্গে নিরাপত্তা, মামলা-মোকদ্দমা ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে।
সালাহউদ্দিন আহমদের বক্তব্যে স্পষ্ট—বিএনপি এখন নির্বাচনের ময়দানে নামার পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছে, আর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরা সেই প্রস্তুতির কেন্দ্রবিন্দুতে। তবে আগামী নভেম্বর সত্যিই তারেক রহমান ফিরতে পারবেন কি না—এটাই এখন রাজনীতির সবচেয়ে আলোচিত প্রশ্ন।







