
দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচন। আগামী ১৫ই অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে ভোটগ্রহণ। চাকসু নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যেই প্যানেল ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির নানান ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন। তবে এরই মধ্যে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমর্থিত প্যানেলের পদপ্রার্থীরা।
কেবল প্রচারণা নয়, তারা ছুটছেন শিক্ষার্থীদের অসুবিধার কথা জানতে এবং তা সমাধানে চাচ্ছেন শিক্ষার্থীদের সমর্থন, যাতে আসন্ন চাকসু নির্বাচনে বিজয় লাভ করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট নিয়ে তারা কাজ করতে পারে।
এবারের চাকসু নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল থেকে সহ-ছাত্রী কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নাট্যকলা বিভাগের ২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী, ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ সাফকাত শফিক। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে যুক্ত সাফকাত শফিক। নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের পাশে থেকেই কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেই তিনি চালাচ্ছেন তার প্রচারণা।
দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকা সাফকাত শফিক তার রাজনীতির শুরু নিয়ে বলেন, জাতীয়তাবাদী আদর্শ অনুযায়ী আমি ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে যুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম থেকেই। ২৪-এর সোচ্চার আন্দোলনের পর আমি ক্যাম্পাসের রাজনীতিতে সক্রিয় হই।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে নিজের পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি দৈনিক দিনকালের চবি প্রতিনিধি আল ইয়ামিম আফ্রিদি কে বলেন, আমি একজন জুনিয়র সেশনের শিক্ষার্থী হিসেবে এমন একটি ক্যাম্পাস দেখতে চাই যেখানে শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে জ্ঞানার্জন করতে পারবে, তাদের মেধার পূর্ণ বিকাশ ঘটবে এবং একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় থাকবে।
দীর্ঘদিন স্তব্ধ থাকা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গণে প্রাণ ফেরাতে সাফকাত শফিক তার প্রচেষ্টার কথা জানিয়ে বলেন, নিয়মিত তহবিল সরবরাহ ও কার্যক্রমে সহায়তা প্রদান, নিয়মিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন যেমন বিতর্ক প্রতিযোগিতা, নাট্যানুষ্ঠান, সঙ্গীত সন্ধ্যা, চলচ্চিত্র উৎসব ইত্যাদির আয়োজন করা। নতুন প্রতিভা অন্বেষণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে লুকায়িত সুপ্ত প্রতিভা খুঁজে বের করে তাদের বিকাশে সহায়তা করা। শিক্ষক-শিক্ষার্থী যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে গতি আনার মাধ্যমে আমরা আমাদের সংস্কৃতিক উদ্যমকে আমরা ফিরিয়ে আনতে পারব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাগুলো নির্বাচিত হলে সমাধান করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমি শাফকাত, একজন শিক্ষার্থী এবং ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে মনে করি, ইচ্ছা ও একাগ্রতা থাকলে যেকোনো সমস্যার সমাধান সম্ভব। নির্বাচিত হলে আমি অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানে সর্বাত্মক চেষ্টা করব। আমার বিশ্বাস, শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত শক্তি এবং প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে আমরা এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারব। এক্ষেত্রে, আমার জাতীয়তাবাদী আদর্শ আমাকে নীতি ও মূল্যবোধের প্রশ্নে আপোষহীন থাকতে উৎসাহিত করবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে সাফকাত শফিক নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন, এ বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা আবাসন সংকট। পর্যাপ্ত হলের অভাব এবং হলের নোংরা পরিবেশ। শাটল ট্রেন ও বাসের অপর্যাপ্ততা এবং সময়সূচির অনিয়ম। চিকিৎসা ব্যবস্থার দুর্বলতা, মেডিকেল সেন্টারের সীমাবদ্ধতা এবং জরুরি সেবার অভাব। ক্যাম্পাসে নারীদের প্রতি উদাসীনতা, সান্ধ্য আইন নামক অযৌক্তিক বিধি এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা। গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও ন্যায্য দাবি আদায়ে বাধা এবং বিশেষ গোষ্ঠীর মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া। এসব অবশ্যই অচিরে আমাদের প্রাণের ক্যাম্পাসে জ্ঞান অর্জন প্রক্রিয়াকে স্থবির করে দিবে।
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে নিজের পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি একজন ছাত্রী হিসেবে দেখি ও অনুভব করি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা দিতে প্রশাসন ব্যর্থ এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রদানে যথাযথ উদাসীনতা দেখায়। সে জায়গা থেকে আমি জানি না ক্যাম্পাসের নিরাপত্তাকর্মীদের কাজ কী। যাই হোক, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ও চিকিৎসা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আধুনিকায়ন করা উচিত। এজন্য নিরাপত্তা কর্মীদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা এবং নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সান্ধ্য আইন নামক অযৌক্তিক বিধান প্রত্যাহার জরুরি। ক্যাম্পাসজুড়ে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ চালু করা হলে অপরাধমূলক কার্যকলাপ প্রতিরোধ সম্ভব। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আত্মরক্ষামূলক কৌশল নিয়ে কাউন্সেলিং ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেতে পারে।চিকিৎসা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে মেডিকেল সেন্টারকে আধুনিক সরঞ্জাম ও পর্যাপ্ত ওষুধ দিয়ে সজ্জিত করতে হবে। আমি দেখি যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারটি প্রায় ‘নাপা সেন্টার’-এ পরিণত হয়েছে। বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ দিতে হবে এবং ২৪ ঘণ্টা জরুরি অ্যাম্বুলেন্স সেবা নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে আমাদের ক্যাম্পাসে মাত্র দুটি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে যা শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত নয়। জরুরি মুহূর্তে কল দিলেও অ্যাম্বুলেন্স সেবা পাওয়া যায় না। নারী শিক্ষার্থীরা হল থেকে অসুস্থ হলে রাতে কিংবা দিনে চিকিৎসা নিতে না পেরে কষ্ট পান। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে নিয়মিত কাউন্সেলিং ও মনস্তাত্ত্বিক সহায়তার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
এছাড়াও আবাসন সমস্যা সমাধানের জন্য হল সংখ্যা বৃদ্ধি, হলগুলোর সংস্কার ও খাবারের মান উন্নয়ন প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। যাতায়াত সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি শাটল ট্রেনের বগি সংখ্যা এবং সিট সংখ্যা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।