
গবেষণা এবং চিকিৎসা শিক্ষা: উদ্ভাবনকে অনুপ্রাণিতকরণ ও বৈশ্বিক স্বীকৃতি নিশ্চিতকরণ’ এই প্রতিপাদ্যের উপর ভিত্তি করে চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ডেন্টাল কলেজ ও চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল নার্সিং কলেজ এর যৌথ উদ্যোগে একটি আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সিম্পোজিয়াম কলেজ ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে “ইনস্টিটিউশনাল সিম্পোজিয়াম ফর মেডিকেল এডুকেশন এন্ড রিসার্চ (আইএসএমইআর)-২০২৫ ” শীর্ষক এ বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে সর্বমোট ৬০০ জন চিকিৎসক, গবেষক, একাডেমিশিয়ান ও ভবিষ্যৎ গবেষক অংশ নেন। উক্ত সিম্পোজিয়ামে সর্বমোট ১২টি সেশনে ৭০ টি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপিত হয়। যার মধ্য থেকে ৪৯টি অরজিনাল গবেষণা প্রবন্ধ।
০২টি প্লেনারী সেশনে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক এম এ ফায়েজ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন ফ্যাকাল্টির সাবেক ডীন অধ্যাপক মো. আমির হোসেন, বিএমইএসি’র রেজিষ্ট্রার অধ্যাপক ডা. হুমায়ন কবির তালূকদার. কিডনী রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. প্রদীপ কুমার দত্ত, পাকিস্তানের মারগালা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থোডন্টিকস এর অধ্যাপক ডা. আফিফ ওমর জিয়া, থাইল্যান্ডের মাহিদোল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যামিলি হেলথ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কানিথা চামরুনসোয়াসদী।
সিম্পোজিয়ামের সমাপনী অনুষ্ঠানে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালেদ হোসেন বলেন, আজকের দ্রুত অগ্রসরমান চিকিৎসা পরিমন্ডলে উচ্চমানের শিক্ষা ও অর্থবোধক গবেষণার সমন্বয় আমাদের স্বাস্থ্যখাতের ভবিষ্যৎ গঠনে অপরিহার্য। গবেষণা-ভিত্তিক শিক্ষা কেবলমাত্র একাডেমিক মান উন্নত করে না, বরং আমাদের ক্লিনিশিয়ান এবং শিক্ষকদের এমন সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা ও অভিযোজিত দক্ষতা প্রদান করে যেগুলি তারা উদীয়মান স্বাস্থ্য সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারবে। শিক্ষক, চিকিৎসক এবং গবেষকদের একত্রিত করে এই সিম্পোজিয়াম একটি মূল্যবান ফ্ল্যাটফর্ম প্রদান করছে যেখানে গঠনমূলক আলোচনা, উদ্ভাবনী ধারণার বিনিময় এবং সহযোগিতামূলক অন্বেষণ সম্ভব হচ্ছে। এই ধরনের অংশগ্রহণ আমাদের বোঝাপড়াকে সমৃদ্ধ করে এবং ক্লিনিক্যাল অনুশীলন, একাডেমিক উৎকর্ষ ও রোগীর চিকিৎসায় উন্নতি সাধনে সহায়ক হয়। গবেষণানির্ভর চিকিৎসা শিক্ষা আমাদেরকে কেবল নতুন জ্ঞান তৈরি করাই নয়, তা বাস্তবে প্রয়োগ করার মাধ্যমে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে এবং জাতীয় স্বাস্থ্য অগ্রাধিকারসমূহকে সমর্থন করতে সক্ষম করে।

সিম্পোজিয়াম উদ্বোধনকালে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আসুন আমরা সবাই মিলে চট্টগ্রামকে হেলদি সিটি হিসেবে গড়ে তুলি। ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল নিয়মিতভাবে সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করছে তা হেলদি সিটি গড়ার জন্য জ্ঞান উৎপাদনের দিক থেকে সহায়ক। বিশেষ করে ইনোভেটিভ ও সময়োপযোগী বিষয় নিয়ে তারা যে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তা আমাদের চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ইনস্টিটিউশনাল সিম্পোজিয়াম ও সেমিনারের মধ্য দিয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ চিকিৎসা উদ্ভাবন এবং চিকিৎসকদের দক্ষতা আরও শাণিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে মেডিকেল সায়েন্সে দিন দিন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত হচ্ছে। সিম্পোজিয়ামে দেখেছি, কীভাবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) চিকিৎসাবিজ্ঞানে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। আমি মনে করি, বাংলাদেশেও এসব বিষয়ে আরও গভীর গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। তবে একইসঙ্গে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি—যত উন্নত প্রযুক্তিই আসুক না কেন, চিকিৎসকের ‘ক্লিনিক্যাল আই’ বা ক্লিনিক্যাল পর্যবেক্ষণ দক্ষতার কোনো বিকল্প নেই।
মেয়র বলেন, বিশেষ করে নতুন ডাক্তার ও ইন্টার্নদের উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই—রোগীকে বেশি বেশি সময় দিতে হবে। রোগীর সঙ্গে কথা বলতে হবে, শারীরিক পরীক্ষা করতে হবে, রোগীকে স্পর্শ করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত রোগীর পূর্ণাঙ্গ জেনারেল ও ফিজিক্যাল এক্সামিনেশন করা না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সঠিক ডায়াগনোসিসে পৌঁছানো সম্ভব নয়। লিভার বড় হয়েছে কি না, স্প্লিনের অবস্থা, কিডনি, হার্ট ও ফুসফুস সঠিকভাবে পরীক্ষা করতে হবে। এরপর ইনভেস্টিগেশন আসবে। রোগীর পারিবারিক ইতিহাস, পূর্ববর্তী রোগ ইতিহাস—সবকিছুই একটি সঠিক ডায়াগনোসিসের ভিত্তি তৈরি করে।
তিনি আরও বলেন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স চিকিৎসকদের সহায়ক হতে পারে, কিন্তু এটি কখনোই চিকিৎসকের অভিজ্ঞতা ও মানবিক স্পর্শের বিকল্প নয়। একজন ভালো চিকিৎসক হতে হলে রোগী দেখতে হবে, রোগীর কথা শুনতে হবে এবং রোগীর সঙ্গে মানবিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।
মেয়র বলেন, আমাদের দেশের বিপুল পরিমাণ অর্থ চিকিৎসার জন্য বিদেশে চলে যাচ্ছে—ভারত, থাইল্যান্ড, চীনসহ বিভিন্ন দেশে। এই রোগীদের যদি আমরা দেশে ধরে রাখতে পারি, তাহলে সেই অর্থ দেশের স্বাস্থ্যখাতেই বিনিয়োগ করা সম্ভব হবে। এর ফলে আরও উন্নত হাসপাতাল গড়ে তোলা যাবে, গবেষণায় আগ্রহী চিকিৎসকদের যথাযথ সম্মান ও সুযোগ দেওয়া যাবে, যাতে তারা বিদেশে পাড়ি জমাতে বাধ্য না হন।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা—এই দুটি খাত মানুষের মৌলিক অধিকার। ভবিষ্যতে যদি বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে, তাহলে এই দুই খাতে বাজেট বৃদ্ধি এবং টেকসই বিনিয়োগ নিশ্চিত করার বিষয়ে আমাদের সুস্পষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে। আমি বর্তমান সরকারের প্রতিও আহ্বান জানাই স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বাজেট বাড়ান। এই দুই খাতে যথাযথ বিনিয়োগ ছাড়া একটি সুন্দর ও শক্তিশালী জাতি গঠন সম্ভব নয়।
সিম্পোজিয়ামে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্য অধ্যাপক ডা. ওমর ফারুক ইউসুফ। উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ফ্যাকাল্টির ডীন ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. জসিম উদ্দিন, সার্জিক্যাল ফ্যাকাল্টির ডীন অধ্যাপক ডা. মাসুদ করিম, বেসিক ও প্যারা ক্লিনিক্যাল সায়েন্সের ডীন অধ্যাপক অজয় দেব, মেডিকেল টেকনোলজি ফ্যাকাল্টির ডীন ডা. ইব্রাহিম চৌধুরী।
ক্যাপশন-
১. “ইনস্টিটিউশনাল সিম্পোজিয়াম ফর মেডিকেল এডুকেশন এন্ড রিসার্চ” সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালেদ হোসেন
২. “ইনস্টিটিউশনাল সিম্পোজিয়াম ফর মেডিকেল এডুকেশন এন্ড রিসার্চ” সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন







