ডা.শাহাদাতের এক বছরে নগর বাসী জলাবদ্ধতা মুক্ত হলো

ডা.শাহাদাতের এক বছরে নগর বাসী জলাবদ্ধতা মুক্ত হলো

ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট দেশ থেকে পালিয়ে যায় জঘন্যতম গণহত্যার কারী শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের সবস্থানে বিনা ভোটের মেয়র,চেয়ারম্যান, মেম্বার,কাউন্সিলরা পালিয়ে যায়। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষ সব সেবা যখন বন্ধ হয়ে যায় তখন আদালতের রায়ে দায়িত্ব পান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এর মেয়রে।তিনি আট কেউ নন।তত কালিন চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি ও শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক ডা.শাহাদাত হোসেন।

তিনি দেশের একমাত্র জন প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে এক বছর অতিক্রম করলেন। এ এক বছরে চট্টগ্রাম নগর বাসীর প্রাপ্তি এবং প্রত্যাশা কতটুকু পুরান করতে পারলো এটা নিয়ে চলছে আলোচনা।
তবে তিনি দায়িত্ব নিয়ে বসে থাকেনি। রাতদিন নগর বাসীর সেবা দিতে গুরে বেড়িয়েছেন নগরীর এক প্রান্তর থেকে অন্য প্রান্তরে। গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটি ও হেলদি সিটি করার তার নির্বাচনী ইশতেহার ছিল সেটা করতে চেষ্টা করে ছেন।
নিয়মিত কর্পোরেশন এর কাজ করে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ৫/৬ টি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন।আজ ৫ নভেম্বর দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্ণ করবেন তিনি।
প্রতি বছর বর্ষাকালে নগরীর বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা হতো তা ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কমিয়ে আনতে পেরেছেন। গত প্রায় দুই–তিন যুগ আমাদের প্রধান সমস্যা ছিল জলাবদ্ধতা। একসময় একটা স্লোগান ছিল, ‘পানির নিচে মুরাদপুর, কেমনে হবে সিঙ্গাপুর’। যাই হোক, এখন মুরাদপুরে আর পানি উঠে না। তাই মানুষ স্লোগান ভুলে গেছে। স্মার্ট ও হেলদি সিটি গড়তে ইতি মধ্যে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছেন।
মেয়র বলেন, মাত্র এক বছরের মধ্যে চট্টগ্রামকে জলাবদ্ধতামুক্ত শহর হিসেবে গড়তে পেরেছি। এখনও শতভাগ জলাবদ্ধতামুক্ত করতে পারিনি। তবে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ জলাবদ্ধতামুক্ত করেছি।জলাবদ্ধতার একটা পূর্ণাঙ্গ রেজাল্ট পেতে হলে আরও ২১টি খাল সংস্কার করতে হবে। ২১টি খালের ডিপিপি আমরা রেডি করছি। নগরীর ৩৬টি খালের বাইরে এই ২১টি খাল যদি সংস্কার করতে পারি তাহলে জলাবদ্ধতামুক্ত নগরী উপহার দিতে পারবো।

মেয়র বলেন, পার্সোনালি বলেছিলাম ৪১টি ওয়ার্ডে ৪১টি খেলার মাঠ করা। এর মধ্যে ১১টি খেলার মাঠের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছি এবং বিভিন্ন স্কুল-কলেজের যে মাঠগুলো সংস্কার করার দরকার ছিল সেই জায়গায় আমি হাত দিয়েছি।বাচ্চাদের জন্য হেলথ স্কিম চালু করেছি। স্বল্পমূল্যে এনআইসিইউ সেবা এবং ডায়ালাইসিস সেন্টারের সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। পুরো অক্টোবর মাসব্যাপী ব্রেস্ট ক্যান্সার ও লিভার ক্যান্সার এওয়ারনেস প্রোগ্রাম ও করেছেন।
আরেকটি কাজ আমি বাংলাদেশে প্রথম করেছি, সেটি হচ্ছে স্কুল হেলথ কার্ড। আমাদের বাচ্চাদের হেলথ চেকআপ করা। শিক্ষার্থীরা বর্জ্য কোথায় এবং কীভাবে ফেলবে সেটা শেখানো জরুরি। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন; বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদন। দেশে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রামে আমরা সেটা করতে পেরেছি। একটি কোরিয়ান কোম্পানি এটির ফিজিবিলিটি স্ট্যাডির কাজ করছে।

মেয়র বলছেন, নির্বাচনী ইশতেহারের বাইরেও শহর চট্টগ্রামকে নান্দনিক ও বাসযোগ্য করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা না পেলেও নিজের আন্তরিকতার কমতি ছিল না। ৫৫ জন কাউন্সিলরের অভাব দূর করতে ছুটেছেন শহরের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। আর্থিক সীমাবদ্ধতা ও নানা প্রতিবন্ধকতাও সত্ত্বেও বাস্তবায়নও করেছেন নানা পরিকল্পনা। জলাবদ্ধতা নিরসনে পেয়েছেন সাফল্য। সেরার স্বীকৃতি মিলেছে সিটি গভর্ন্যান্স মূল্যায়নে। এরপরও কাজের মূল্যায়নের ভার ছেড়ে দিচ্ছেন নগরবাসীর প্রতি।

তিনি জানান,দিনের পরিবর্তে রাতে বর্জ্য অপসারণ, বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তরে প্রকল্প নেয়া, প্রশাসনিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় অস্থায়ীদের স্থায়ীকরণ, দুর্নীতি করলে ব্যবস্থা নেয়া, চসিককে স্বাবলম্বী করতে পুনর্মূল্যায়নের আলোকে বন্দর থেকে পৌরকর আদায়ের উদ্যোগ, বেদখলে থাকা প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি উদ্ধার, কর্মস্থলে পরিচ্ছন্নকর্মীদের উপস্থিতি নিশ্চিতে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পরিদর্শন ও পরিচ্ছন্নকর্মীদের হাজিরা নেয়াসহ নাগরিক সেবা নিশ্চিতে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।

মেয়র বলেন, আমার অনেক স্বপ্ন চট্টগ্রামকে নিয়ে। যার কারণে আমি ক্লিন, গ্রিন, হেলদি এন্ড সেফ স্মার্ট সিটি করতে চাই। ইতোমধ্যে স্মার্ট সিটির আওতায় চট্টগ্রাম সিটিকে আনার জন্য ওয়াইফাই জোনসহ গ্রামীণফোনের সাথে আমাদের একটা এমওইউ হয়েছে। আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি। মনোরেল করার জন্য কায়রোর একটা কোম্পানি আরব কন্ট্রাক্টরসের সাথে আমাদের একটা এগ্রিমেন্ট হয়েছে। যেটা প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। বর্জ্য অপসারণে কোরিয়ান একটা কোম্পানির সাথে আমাদের এমওইউ হয়েছে। ইউকের একটা কোম্পানি এবং নিউজিল্যান্ডের আরেকটা কোম্পানির সাথে আমাদের কথা চলছে। আপনারা জানেন কালুরঘাট শিল্পাঞ্চলে আমাদের একটা আইসিটি ভবনের অলরেডি কিছু কাজ হয়েছে। সেটাও আমরা ফারদার কাজ করে একটা পরিপূর্ণ জায়গায় আনতে চাই। আমাদের ৪০ থেকে ৫০টা বড় বড় সড়কের টেন্ডার কিছু হয়েছে; আর কিছু টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন। এগুলো হলে চট্টগ্রাম শহরের রাস্তাঘাটের চেহারা অনেক পরিবর্তন হয়ে যাবে। লাইটের জন্য প্রায় আট থেকে ১০টা টেন্ডার হয়েছে। সড়কবাতির জন্য সেটা আমরা করে দিচ্ছি এবং এই যে উড়াল সড়কগুলোকে ক্যামেরার আওতায় আনা, সেগুলো আমরা করে দেবো ইনশাআল্লাহ। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সবচেয়ে বড় এচিভমেন্ট হচ্ছে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটিকে দখলমুক্ত করা। ২০১৬ সালের পর থেকে একটা পরিবার সেটা কুক্ষিগত করে রেখেছিল। এই প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটিটা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন আবার ফিরে পেয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় চসিকের ষষ্ঠ পরিষদের নির্বাচন। এতে ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ডা. শাহাদাত। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. রেজাউল করিম চৌধুরীকে নির্বাচিত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। একই বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি শপথ নেন এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন রেজাউল করিম। ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ডা. শাহাদাত ৯ জনকে বিবাদী করে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা করেন। ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর চট্টগ্রামের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক খাইরুল আমিন ডা. শাহাদাতকে মেয়র ঘোষণা করে এ মামলার রায় দেন। রেজাউল করিম চৌধুরীর মেয়র নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করেন। এরপর ৮ অক্টোবর ডা. শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন। ৩ নভেম্বর শপথবাক্য পাঠ করেন এবং ৫ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন মেয়র শাহাদাত।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp
Share on email