দেনার টাকা পরিশোধ করতে সদ্য প্রসূত ছেলে বিক্রি 

দেনার টাকা পরিশোধ করতে সদ্য প্রসূত ছেলে বিক্রি 
ঝিনাইদহে দেনার টাকা পরিশোধ করতে সদ্য প্রসূত ছেলে সন্তানকে মা সুমাইয়া খাতুন দত্তক দিতে বাধ্য হয়েছেন। বিনিময়ে মিলেছে হাসপাতালের বিল পরিশোধ ও নগদ ৬৫ হাজার টাকা। আর এতে সহযোগিতা করেন ক্লিনিকের নার্স ইসমোতারা।

বিষয়টি জানাজানি হলে গতকাল বুধবার বিকেলে পিয়ারলেস প্রাইভেট হাসপাতালে মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাদিজা আক্তারের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালান।

এসময় হাসপাতালটির কাগজপত্রে ত্রুটি ও হাসপাতালের পরিবেশ ভালো না থাকায় মালিক সেলিম রেজা বাবুকে ৬ মাসের কারাদণ্ড এবং শিশু সন্তান বিক্রির সহযোগিতাকারী হিসেবে নার্স ইসমোতারাকে আটক করে পুলিশ।

এর আগে গত মঙ্গলবার দুপুরে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার নেপার মোড়ের পিয়ারলেস প্রাইভেট হাসপাতালে ঘটনাটি ঘটে। সুমাইয়া খাতুন ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নের আনছার মোড়ের সাত্তার আলীর ছেলে মৃত আলামিনের স্ত্রী।

সুমাইয়ার পরিবারের সদস্যরা জানান, ৪ মাসের গর্ভবতী থাকা অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সুমাইয়া খাতুনের স্বামী আলামীন মারা যান। এরপর স্বামী কিংবা পিতা কোনো বাড়িতেই ঠাঁই মেলেনি তার। অবশেষে বৃদ্ধা নানির বাড়িতে আশ্রয় নেন তিনি।

পরে মঙ্গলবার দুপুরে প্রসব বেদনা উঠলে এক প্রতিবেশীর মাধ্যমে স্থানীয় এক ক্লিনিকে সিজার অপারেশনের মাধ্যমে ছেলে সন্তান জন্ম দেন সুমাইয়া। পরে অভাবের তাড়নায় সদ্যপ্রসূত সন্তানকে দত্তক দিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। বিনিময়ে মিলেছে হাসপাতালের বিল পরিশোধ ও কিছু নগদ টাকা।

নবজাতকের মা সুমাইয়া খাতুন বলেন, ‘স্বামীর মৃত্যুর পর গর্ভাবস্থায় কোথাও ঠাঁই পাইনি। গর্ভবতী অবস্থায় লোকের কাছে ধারদেনা করেকরে চলেছি। ক্লিনিকের খরচ, সন্তান মানুষ করা আমার পক্ষে সম্ভব না। সেই কারণে নবজাতক সন্তানকে দত্তক দিতে বাধ্য হয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘যারা দত্তক নিয়েছে তাদেরকে আমি চিনি না, শুধু শুনেছি তাদের বাড়ি কুমিল্লায়।’

এ ঘটনায় পিয়ারলেস প্রাইভেট হাসপাতালের মালিক সেলিম রেজা বাবু জানান, সিজারের পর রোগীর দেখাশোনা ছাড়া আমার করার কিছু নেই। রোগী যদি কারও সঙ্গে আপস করে সন্তান দিয়ে দেন, সেটার জন্য আমি দায়ী নই।

মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খাদিজা আক্তার জানান, ক্লিনিকের কাগজপত্রে ত্রুটি ও হাসপাতালের পরিবেশ ভালো না থাকায় পিয়ারলেস প্রাইভেট হাসপাতালের মালিক সেলিমকে ৬ মাসের কারাদণ্ড ও শিশু বিক্রির সহযোগিতাকারী নার্সকে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp
Share on email