
চট্টগ্রাম বন্দরে ট্যারিফ ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার্স ফোরামের উদ্যোগে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় ব্যবসায়ী নেতারা সাতদিনের মধ্যে ট্যারিফ বাতিল না হলে চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধের হুমকি দিয়েছেন। শনিবার (১৮ অক্টোবর) নগরের নেভি কনভেনশনে চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার্স ফোরামের আহ্বায়ক আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভার আহ্বায়ক আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা গত বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। সেখান থেকে আনঅফিশিয়ালি জানানো হয়েছে, জুলাই সনদ স্বাক্ষরের কর্মসূচির কারণে তিনি মনোযোগ দিতে পারছেন না। তাই আমরা আজকে এ প্রতিবাদ সভা আয়োজন করেছি। এরপরও মনোযোগ দেওয়া না হয় তাহলে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা বেশিদিন আর অপেক্ষা করবে না। একটা কর্মসূচি আমাদেরকে অবশ্যই দিতে হবে। তো সেজন্য আমি এখন আপনাদের সামনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করছি।’
তিনি বলেন, ‘সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন আগামীকাল থেকে চার ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করবে। আরো দুটি অর্গানাইজেশন ঠিক একইভাবে তাদের কর্মবিরতি পালন করবে। আমরা আজকে আবার সরকারকে আরেকটা স্মারকলিপি দেব এগুলি জানিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে যদি এটা সমাধান করা না হয় তাহলে চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ করে দেওয়া হবে।’
এ কর্মসূচিতে সারা বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা একাত্মতা জানাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা যেন বাংলা চট্টগ্রাম তথা এটা এটা কিন্তু শুধু চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের জন্য নয়। এটা সারা বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের জন্য। সারা বাংলা দেশের জনগণের জন্য কারণ এই টাকা যাবে জনগণের পকেট থেকে।’
এলপিজি অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মো. আমিরুল হক বলেন, ‘দুর্ভাগ্যভাবে আমার জন্মটা মগের মূলকে হয়েছে। ভেরি আনফরচুনেটলি যারা এখন এই ট্যারিফটা যারা করেছেন, তারা মনে করেছেন যে মগের মূল্যকের মানুষ উপরে আমরা চাপিয়ে দিলাম। ওদের কোন কথার কোন দাম নাই। আমার ড্রাইভার যখন এখানে আসছে সে তো ফ্রি খাবে। ড্রাইভার কি পয়সা দিয়ে খাইতে হবে? নাকিরে ভাই এটা কোন ধরনের কথা ড্রাইভার পয়সা দেবে কেন বলেন না এটা কোন সমাজে আছে গাড়ি যখন যায় কর্ণফুলি ব্রিজ দিয়ে কিংবা কোন ব্রিজ দিয়ে গাড়ির জন্য পয়সা নেই। ড্রাইভারের জন্য পয়সা আছে নাকি ভাই? গেট পাস কি ড্রাইভারের জন্য হতে পারে? এটা কি কোন সভ্য সমাজে আছে?’
তিনি আরও বলেন, ‘একসময় গেট পাস ছিল ৫০ পয়সা। মনে আছে, কিনা মনে নাই। আমরা যারা পোর্টে ঢুকতাম গেইট পাস ছিল ৫০ পয়সা। সেই ৫০ পয়সা ২৩০ টাকা করবেন। আমরা আসলেই মগের মূল্য আছি। এই ধরনের কোন অন্যায্য দাবি ৭০০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে ফোর টাইম, ফাইভ টাইম, সিক্স টাইম, সেভেন টাইম পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।’
সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন আগামীকাল থেকে চার ঘণ্টা কর্মবিরতি করবেন। আরো দুইটি সংগঠনও তাদের কর্মসূচি গ্রহণ করবে। এক সপ্তাহের মধ্যে যদি এই ট্যারিফ বাতিল না হয়, তাহলে চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ করে দেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম সাইফুল আলম বলেন, ‘হঠাৎ করে ট্যারিফ বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবহন শ্রমিকরা। কিন্তু এ ক্ষতি সামগ্রিকভাবে সারাদেশের মানুষের উপর প্রভাব ফেলবে। তাই আমরা চাই, সরকার এই ট্যারিফের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসুক। নতুবা আমাদের কঠোর কর্মসূচি হাতে নিতে হবে।’
এতে বিজিএমইএ নেতা ও এশিয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ সালাম বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা সাধারণত প্রতিবাদ করে না। কিন্তু আমাদের বাধ্য হয়ে প্রতিবাদ করতে হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়ার শর্তেও কোনো আলাপ-আলোচনা ছাড়া ট্যারিফ বাড়ানো হয়েছে। আমেরিকার ট্যারিফ কমাতে আমাদের সরকার যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, সেই সরকার এটি কেমন দ্বিচারিতা করেছেন তা আমরা বুঝতে পারছি না।’
বিজিএমইএর পরিচালক এস এম আবু তৈয়ব বলেন, ‘আমরা প্রতিবাদ করার কথা নয়। কিন্তু প্রতিবছরে সব খরচ বাদ দিয়ে যে প্রতিষ্ঠান আড়াই থেকে তিন হাজার কোটি টাকা লাভ করে সেই প্রতিষ্ঠান তাদের স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে কোনো আলাপ না করে কীভাবে ট্যারিফ বাড়াতে পারে?’
চট্টগ্রাম শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি পারভেজ সাত্তার বলেন, ‘আমি যখন শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তখন ডলারের মূল্য ছিলো ৩১ টাকা। তখন থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের ট্যারিফ বাড়তে চেয়েছিল। আমরা কিন্তু এক টাকাও বাড়াতে দিইনি। বর্তমানে পোর্ট ইউজার্স ফোরামের নেতৃত্বে আছেন আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী। তিনি একজন ডায়নামিক লিডার। আমি আশা করছি, উনিও সফল হবেন।’