
‘বন্দর রক্ষায় চট্টগ্রামের শ্রমিক-ছাত্র-পেশাজীবী-নাগরিকবৃন্দে’র আহ্বানে আজ শনিবার নগরীর আগ্রাবাদ মোড়ে এক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ থেকে সরকারের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে শ্রমিক কর্মচারী ও বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ বক্তব্যে বলেছেন, লাভজনক চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ডিপি ওয়ার্ল্ড কিংবা অন্য কোনো বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত রুখতে প্রয়োজনে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন গণমুক্তি ইউনিয়ন সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজা মিঞা।
সমাবেশে বক্তারা আরো বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর লাভজনক ও সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও,বিদেশি কোম্পানির ব্যবসায়িক স্বার্থ ও আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদীদের এ অঞ্চলকে কেন্দ্র করে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে নিউমুরিং টার্মিনাল ও লালদিয়য়ার চর বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়ার চক্রান্ত চলছে।বিনা প্রতিরোধে এ বিষয়ে চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার বন্দর এলাকায় একমাসের জন্য সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। ফ্যাসিবাদী পতিত আওয়ামী লীগ সরকার বিনা টেন্ডারে ডিপি ওয়ার্ল্ডকে নিউমুরিং টার্মিনাল তুলে দেয়ার আয়োজন সম্পন্ন করেছিল। গণঅভ্যুত্থানের পরও বর্তমান সরকার কেন আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে তার জবাব সরকারকে দিতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষায় আজ চট্টগ্রামের নাগরিক, শ্রমিক, পেশাজীবী, ছাত্ররা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।প্রয়োজনে কঠোর কর্মসূচি দিয়ে দেশবিরোধী এ তৎপরতা প্রতিহত করা হবে।
লাভজনক চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেয়ার চক্রান্তের প্রতিবাদে ‘বন্দর রক্ষায় চট্টগ্রামের শ্রমিক-ছাত্র-পেশাজীবী-নাগরিকবৃন্দে’র ডাকে অনুষ্ঠিত উক্ত বিক্ষোভ সমাবেশে চট্টগ্রাম বন্দরের শ্রমিক-কর্মচারী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শ্রমিক সংগঠন, ছাত্র ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এতে বক্তব্য রাখেন ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সভাপতি খোরশেদ আলম, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের (স্কপ) চট্টগ্রামের যুগ্ম সমন্বয়ক রিজওয়ানুর রহমান, বাসদ(মার্কসবাদী) জেলা সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শফিউদ্দিন কবির আবিদ, বন্দর জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সেক্রেটারি ইব্রাহিম খোকন,ডক শ্রমিক দলের সেক্রেটারি আখতারউদ্দিন সেলিম, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন সেক্রেটারি জাহিদউদ্দিন শাহীন, গণঅধিকার চর্চা কেন্দ্রের মশিউর রহমান খান, প্রকৌশলী সিঞ্চন ভৌমিক, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন সেক্রেটারি জাহেদুন্নবী কনক, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল নেতা সাইফুর রুদ্র, বন্দর জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি হুমায়ুন কবির, আবদুল্লাহ আল মামুন, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল সভাপতি ধ্রুব বড়ুয়া, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নগর দফতর সম্পাদক লাবণী আকতার প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি সত্যজিৎ বিশ্বাস।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর বছরে আড়াই হাজার কোটি টাকারও বেশি মুনাফা অর্জন করছে। তা সত্বেও বিদেশি কোম্পানির হাতে বন্দর তুলে দেয়ার আগে থেকেই বিদেশিদের মুনাফা নিশ্চিতের জন্য সরকার বন্দরের ট্যারিফ ৪১ শতাংশ বাড়িয়েছে। অথচ একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এ সিদ্ধান্ত নেয়ার এক্তিয়ার ও ন্যায্যতা নেই। কিন্তু বর্তমান সরকার যেভাবে তড়িঘড়ি এবং কারো মতামতের তোয়াক্কা না করে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে তাতে প্রবল সন্দেহ ঘনীভূত হয়ে উঠেছে, সরকার কাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে উঠেপড়ে লেগেছে? অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে একাধিক বন্দর নেই। দেশের ৯২ ভাগ আমদানি রফতানি চট্টগ্রাম বন্দর দিয়েই সম্পন্ন করা হয়। সেই বন্দর বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেয়ার কোনো যুক্তি নেই।
তাছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থানগত কারণে এর সাথে দেশের সার্বভৌমত্ব- নিরাপত্তার কৌশলগত প্রশ্নও যুক্ত।একারণেই আমরা দাবি তুলেছি চট্টগ্রাম বন্দরের মতো কৌশলগত জাতীয় সম্পদ বিদেশীদের নয়; বেসরকারীকরণও নয়; বরং জাতীয় প্রতিষ্ঠান দিয়ে পরিচালনা করতে হবে।
সমাবেশ থেকে বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে না দেয়ার দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ফ্যাসিবাদবিরোধী বামমোর্চার ডাকে আগামী ২৭ অক্টোবর ঢাকায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ এবং ১ নভেম্বর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে শ্রমিক- কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) আহুত অনশন ধর্মঘট কর্মসূচির প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করা হয়।







