তেকোটা সদ্ধর্ম বিকাশ বিহার প্রাঙ্গণে দুই দিনব্যাপী দানোত্তম শুভ কঠিন চীবর দানোৎসব সম্পন্ন

তেকোটা সদ্ধর্ম বিকাশ বিহার প্রাঙ্গণে দুই দিনব্যাপী দানোত্তম শুভ কঠিন চীবর দানোৎসব সম্পন্ন

মহামানব সাম্যবাদী বুদ্ধ বলেছেন,‘আতœদীপ ভব!’ বুদ্ধের এ আদর্শের পতাকায় নিজেকে বিকশিত করার নামই সদ্ধর্ম বিকাশ বিহার। এর মানে হচ্ছে, নিজের ভিতর আলোর দীপ জ্বালিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। আমার শক্তি, আমার বল। অজ্ঞানকে জ্ঞান প্রজ্ঞার অনুভূতির আলোতে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার শিক্ষা নিতে হবে। হিংসাকে অহিংস নীতিতে, কামনা ও ক্রোধ বীরত্বে নয়, প্রেমের বিশ্বজনীনতা, মানবতা ও মৈত্রী চর্চা হৃদয়ে প্রসারিত করতে হবে। কুশল কর্মের মাধ্যমে নিজেকে করতে হবে প্রচেষ্টামুখী, প্রেরণামুখী, জীবন্ত, প্রাণবন্ত, প্রাণঢালা। এমন দীপ জ্বালাতে হবে যেন সারাবিশ্বে আলো ছড়িয়ে পড়ুক। দীপাঞ্চল হবে এতদ অঞ্চল। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও প্রগতিশীল চিন্তার পথিকৃৎ হয়ে ওঠার আহ্বান। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ উল্লেখিত কথাগুলো বলেন, বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য, একুশে পদকে ভূষিত অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া। পটিয়া উপজেলাধীন তেকোটা সদ্ধর্ম বিকাশ বিহার প্রাঙ্গণে গত শনিবার, ২৫ অক্টোবর দুই দিনব্যাপী কর্মসূচির সমাপনী দিনে বিকেল বেলা জৈষ্টপুরা শাক্যমুনি বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত জিনানন্দ মহাস্থবিরের সভাপতিত্বে প্রধান ধর্মদেশক ছিলেন বান্দরবান স্বর্ণজাদির ভদন্ত উ পাঞঞা তিলক মহাথের, দেশক ছিলেন ভদন্ত শুভানন্দ মহাথেরো, উদ্বোধনী ভাষণ প্রদান করেন তেকোটা সদ্ধর্ম বিকাশ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত শরণ সেন মহাথেরো, স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন বিহার পরিচালনা পরিষদের সভাপতি বিকাশ বড়ুয়া ও সম্পাদকীয় বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক কামনাশীষ বড়ুয়া, সিনিয়র সহ-সভাপতি সুবীর বড়ুয়া, সহ-সভাপতি শুভাশিস বড়ুয়া, সহ-সভাপতি সরিৎ চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা দেবপ্রিয় বড়ুয়া ঝুলন, অধ্যাপক অরূপ বড়ুয়া। পঞ্চশীল প্রার্থনা করেছেন ধর্মীয় সম্পাদক সত্যপ্রিয় বড়ুয়া। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক প্রণব বড়ুয়া। সামগ্রিক অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সহ-সম্পাদক শিপলু বড়ুয়া ও সংগীত শিল্পী রুবেল বড়ুয়া। পরবর্তী সংগীতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। ‘‘এসো বুনি বর্তমান, গড়ে তুলি ভবিষ্যৎ’’ এই প্রতিপাদ্যে ২৪ অক্টোবর বিকেল ৩ টায় রাঙামাটিস্থ বেইন শিল্পীদের সমন্বয়ে কঠিন চীবর বুনন কার্যক্রম উদ্বোধন ঘোষণার মাধ্যমে দানোৎসব এর শুভসূচনা। বেলা শেষে সন্ধ্যায় মানুষের সমাগম বেশী হওয়ার সাথে সাথেই শুরু হয় বিহার উন্নয়ন সংলাপ, কৃতি শিক্ষার্থী সম্মাননা, বিহার ভূমিদাতা সম্মাননা, শ্মশানবন্ধু সম্মাননা ও বিশেষ সম্মাননা। এ পর্বে আশীর্বাদক ছিলেন তেকোটা সদ্ধর্ম বিকাশ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত শরণ সেন মহাথেরো। বিহার পরিচালনা পরিষদের সভাপতি বিকাশ বড়ুয়ার সভাপতিত্বে সূচনা বক্তব্য রাখেন কামনাশীষ বড়ুয়া, বিশেষ সংবর্ধনা পেয়েছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অধীনে বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি রুবেল বড়ুয়া। তিনি তাঁর বক্তব্যে তেকোটা গ্রামের উন্নয়নে দক্ষিণহস্ত প্রসারিত রাখার আশ্বাস প্রদান করেন। এতে প্রধান আলোচক ছিলেন তেকোটা গ্রামের কৃতি সন্তান ও রাঙ্গামাটি সরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ প্রীতি প্রসূন বড়ুয়া। বিশেষ সম্মাননা পেয়েছেন তাঁর জ্যেষ্ঠ কন্যা এমবিবিএস ডাঃ অরুণিমা বড়ুয়া, বিপুল বড়ুয়ার কন্যা সাবরেজিস্টার পূর্বাশা বড়ুয়া, দেবাশীষ বড়ুয়ার ছেলে বিমান বাহিনীর কমিশন প্রাপ্ত পার্থিব বড়ুয়া। চীবর বুননে বিশেষ সহযোগিতার জন্য শুভেচছা স্মারক প্রদান করা হয় গৌতম বড়ুয়া ও সহ-ধর্মীনি ঝুমকি চৌধুরী (ফ্রান্স প্রবাসী)। এছাড়াও স্মারক সম্মাননায় উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা জ্যোতি প্রকাশ চৌধুরী বলরাম, শিক্ষক দেশরক্ষিত বড়ুয়া, মৃণাল কান্তি বড়ুয়া, শিক্ষক সৌমিত্র প্রিয় চৌধুরী। যৌথ সঞ্চালনা করেন শুভাশিস বড়ুয়া ও শিক্ষক জুয়েল বড়ুয়া। এ সময় সহযোগী ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ত্রপা চৌধুরী ও মৃত্তিকা চৌধুরী মৈত্রী। রাত এগারোটায় তেকোটা গ্রামের তরুণদের বুদ্ধ কীর্তন পরিবেশন হয়।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp
Share on email