
দীর্ঘ তিন যুগ পর অনুষ্ঠিত হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন। চাকসু নির্বাচনে শিবির সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল থেকে নির্বাহী সদস্য পদে ৪৪১৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিল আকাশ দাস। ২৩ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) চাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অডিটোরিয়ামে শপথ গ্রহণ করেন। কিন্তু বিজয়ী হয়েও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারেননি আকাশ দাস। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান চলাকালেও আকাশ দাসের উপর তীব্র ক্ষোভ দেখায় শিক্ষার্থীরা।
সম্প্রতি বুয়েট শিক্ষার্থী শ্রীশান্ত রয় কর্তৃক নারী ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম Reddit এ এই স্বীকারোক্তি প্রদান করেন তিনি নিজেই। এ বিষয়েই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন চাকসুতে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল থেকে নির্বাহী সদস্য পদে জয়ী হওয়া আকাশ দাস। পরবর্তীতে পোস্টটি সরিয়ে দিলেও এ ধরনের পোস্ট সাম্প্রদায়িক বিতর্ক উসকে দিতে পারে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
পোস্টে আকাশ দাস সরাসরি দর্শকের সমর্থন করে বলেন, ছেলেটা যদি দোষী প্রমাণিত হয় তাহলে অবশ্যই তার শাস্তি আমি দাবি করছি,কিন্তু মেয়েটা যে নির্দোষ এমনটাও তো নয়। বরং যে ধরনের ধর্ষণকাণ্ডগুলো ঘটে থাকে বেশিরভাগ মেয়েরাই ছেলেদের ফাঁসানোর জন্য ধর্ষণকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। এখানেও এমনটা ঘটেছে কিনা সেটিও তদন্তের আওতায় আনা উচিত বলে আমি মনে করি। ছেলের দোষ যদি ৭০% থেকে থাকে তাহলে আমি বলবো মেয়েটার দোষ ৩০% হলেও আছে। হয়তোবা মেয়েটার মনের মত ছিল না বলে ছেলেটাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। বিগত ঘটনা গুলো বিশ্লেষণ করলে এমনটাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘটেছে।
আকাশ দাসের এরূপ কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী মোঃ মামুন মিয়া দৈনিক দিনকালের চবি প্রতিনিধি আল ইয়ামিম আফ্রিদি কে বলেন, ধর্ষণ একটি ঘৃণ্যতম অপরাধ, এটি যেই ধর্মাবলম্বী ব্যক্তি-ই করুক না কেন। আর চাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধি আকাশ দাস এই অপরাধকে সমর্থন করে অবশ্যই ঘৃণ্যতম অপরাধ করেছেন বলে আমি মনে করি। আমরা এমন অযোগ্য প্রতিনিধি চাকসুতে চাই না।
আকাশ দাস চাকসু নির্বাচনে জয়ী হওয়া নিয়ে চিন্তিত সচেতন মহল। একাংশের দাবি, কোন প্রকার যোগ্যতার যাচাই-বাছাই ছাড়াই শুধুমাত্র প্যানেলের উপর ভিত্তি করে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করা হয়েছে আকাশ দাসকে। চাকসু নির্বাচন ২০২৫ এ ভোটার ছিলেন ২৭ হাজার ৫১৬ জন। এরমধ্যে ভোট দিয়েছেন ১৭ হাজার ৮৮৫ জন। যার মাত্র ৪৪১৫ পেয়েই জয়ী হয়েছেন আকাশ দাস। অর্থাৎ ১৩ হাজার ৪৭০ জন শিক্ষার্থী আকাশ দাসকে অযোগ্য মনে করে ভোট দেননি। সমালোচকদের দাবি, প্রগতিশীলদের ভোট বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়েছে। কিন্তু শুধুমাত্র একত্রিত কিছু ভোটের জন্য আকাশ দাসের মতো অযোগ্য লোকেরা উঠে আসছে চাকসুর মত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়। যা কিনা গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
ধর্ষকের পক্ষ নিয়ে করা আকাশ দাসের পোষ্টটির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে তুলেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সাধারণ শিক্ষার্থীরা আকাশ দাস কে চাকসু থেকে বহিষ্কার করার জন্য আন্দোলন করছে। এ ঘটনা কে কেন্দ্র করে নবাব ফয়জুন্নেছা হলসহ অন্যান্য হল সংসদের সদস্য এবং কেন্দ্রীয় সংসদের নেতৃবৃন্দরা আকাশ দাসের সাথে শপথ গ্রহন করবেন না বলে অনুষ্ঠান বয়কটের ডাকও দিয়েছিলেন। এরই প্রেক্ষিতে চাকসু শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেন নি আকাশ দাস। অনুষ্ঠানে উপস্থিত না হলেও আকাশ দাসের বিরুদ্ধে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান চলাকালে প্রতিবাদে সরব ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।







