
পাহাড় ভূমিকম্প থেকে প্রাকৃতিক সুরক্ষা প্রদান করে। তাই ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি থেকে সুরক্ষায় পাহাড়খেকোদের হাত থেকে চট্টগ্রামকে বাঁচাতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) নগরীর হোটেল পেনিনসুলায় সেভ দ্য চিলড্রেন এর সহায়তায় ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল এ্যাকশন ( ইপসা) আয়োজিত “চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পাহাড়ধস ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার আগাম প্রস্তুতি কর্মপরিকল্পনা যাচাই” বিষয়ক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমনি মতামত ব্যাক্ত করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
সভায় চসিকের পাহাড়ধ্বস প্রবণ ৪টি ওয়ার্ড যথাক্রমে ৭ নং পশ্চিম ষোলশহর, ৮ নং শুলকবহর, ৯ নং উত্তর পাহাড়তলী ও ১৪ নং লালখান বাজার ওয়ার্ডের প্রণয়নকৃত “এ্যান্টিসিপেটরি এ্যাকশন প্ল্যান” উপস্থাপন করেন ইপসার প্রোগ্রাম ম্যানেজার ( মনিটরিং এণ্ড রিচার্স) মোরশেদ হাসান মোল্লা ও প্রকল্প কর্মকর্তা শাহরিয়ার আলম।
মেয়র বলেন, পাহাড়খেকোদের হাত থেকে চট্টগ্রামকে রক্ষা করা এখন সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। নির্বিচারে পাহাড় কাটা শুধু পরিবেশ ধ্বংসই করছে না, এটি সরাসরি মানুষের জীবননাশের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। ভূমিধস কোনো প্রাকৃতিক দুর্ঘটনা নয়, এটি মূলত মানুষের অবিবেচক কর্মকাণ্ডের ফল। তাই আগাম প্রস্তুতি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি অবৈধ পাহাড় কাটা ও অনিয়ন্ত্রিত বসতির বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। পাহাড় রক্ষা, পরিকল্পিত নগরায়ণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর নিরাপদ পুনর্বাসন—এই তিনটি বিষয় একসাথে বাস্তবায়ন না করলে নিরাপদ চট্টগ্রাম গড়া সম্ভব নয়।
“পাহাড়, মানুষ এবং নগরায়ণের সহাবস্থানকে টেকসই করার যে চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে রয়েছে, ভূমিধস, সেই চ্যালেঞ্জের সবচেয়ে ভয়াবহ রূপগুলোর একটি। চট্টগ্রামের ৭,৮, ৯ ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ড দীর্ঘদিন ধরেই ভূমিধস–ঝুঁকিতে রয়েছে। পাহাড় কাটা, অনিয়ন্ত্রিত বসতি, বৃষ্টিপাতের পরিবর্তিত ধারা সব মিলিয়ে ঝুঁকির পরিধি দ্রুত বাড়ছে। এই বাস্তবতায় অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন প্ল্যান আমাদের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার, কারণ এটি দুর্যোগের পূর্বে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সহায়তা করে।”
সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম বলেন, ভূমিধস ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা আর কোনো বিচ্ছিন্ন উদ্যোগ নয়; এটি চট্টগ্রামের দৈনন্দিন উন্নয়ন পরিকল্পনার একটি অবশ্য পালনীয় অংশ। আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা, কমিউনিটি প্রস্তুতি, অবকাঠামো সুরক্ষা এবং পরিকল্পিত নগরায়ণ, এসব ছাড়া নিরাপদ চট্টগ্রাম গড়া সম্ভব নয়। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েছে। তিনি এ্যান্টিসিপেটরি এ্যাকশন প্ল্যান কে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট বলে উল্লেখ করেন এবং পরিকল্পনা প্রণয়ণে এটিকে সিডিএ বিশেষ বিবেচনায় রাখবে বলে উল্লেখ করেন।
ইপসার প্রকল্প কর্মকর্তা মুহাম্মদ আতাউল হাকিম এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য উপস্থাপন করেন ইপসার পরিচালক ( সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট) নাছিম বানু, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এর ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. ইকবাল সরোয়ার, ইঞ্জিনিয়ার ইন্সটিটিউট অফ বাংলাদেশ, চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার দেলোয়ার মজুমদার। এছাড়াও অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম এর অতিরিক্ত পরিচালক রঘুনাথ রাহা, জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আলমগীর, জেলা মৎস কর্মকর্তা সালমা আক্তার, পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রোমানা আক্তার, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর উপ সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, হোসেন আহম্মদ সিটি কর্পোরেশন স্কুল এণ্ড কলেজের অধ্যক্ষ এস এম এহসানুল উদ্দিন, ফিরোজ শাহ সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম, লালখান বাজার শহীদনগর উচ্চ বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক সৌম্য ব্যানার্জি, দৈনিক খবরের কাগজ পত্রিকার ব্যুরো চীফ ইফতেখার উদ্দিন, ইপসার ম্যানেজার সানজিদা আক্তার প্রমুখ।
শুরুতে প্রকল্পের সার্বিক কার্যক্রম ও অগ্রগতি তুলে ধরেন সেভ দ্য চিলড্রেন ম্যানেজার ফাতিমা মেহেরুন্নেছা তানি। উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে বক্তারা এ্যান্টিসিপেটরি এ্যাকশন প্ল্যান এর উপর মতামত ব্যক্ত করেন। উল্লেখযোগ্য মতামতের মধ্যে উঠে আসে ভূমিধস ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় বিচ্ছিন্ন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়। বাস্তবিক পক্ষে এটিকে চট্টগ্রামের উন্নয়ন পরিকল্পনায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। আগাম সতর্কতা ব্যবস্থার উন্নয়ন, কমিউনিটি প্রস্তুতি, অবকাঠামো সুরক্ষা এবং পরিকল্পিত নগরায়ণ কাঠামোতে পাহাড় রক্ষা ব্যবস্থা, পাহাড়ে বসবাসরত ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসন, নিরাপদ শেল্টার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করেন। এছাড়াও “এ্যান্টিসিপেটরি এ্যাকশন প্ল্যান” কে সিটি কর্পোরেশন এর উন্নয়ন পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা, ওয়ার্ড দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে কার্যকর করে আরও শক্তিশালী, প্রশিক্ষিত ও সক্রিয় করে তোলা, পাহাড়ধস প্রবণ এলাকাকে ঝুঁকিমুক্ত, নিরাপদ ও বাসযোগ্য করার উপর প্রস্তাবনা পেশ করেন।







